আমফান সাহায্য নিয়েও; দুর্নীতি শুরু হয়ে গেল। ঘূর্ণিঝড় আমফানে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য; সরকারি ক্ষতিপূরণের টাকা এল। কিন্তু অভিযোগ, তার অনেকটাই প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্তদের বদলে চলে গেল; স্থানীয় তৃণমূল পঞ্চায়েত প্রধানের স্ত্রীর অ্যাকাউন্টে। আমফান কেলেঙ্কারি। আর তাই নিয়ে মঙ্গলবার থেকেই বিক্ষোভে তোলপাড়; শান্তিপুরের বেলগড়িয়া ১, বেলগড়িয়া ২ ও হরিপুর পঞ্চায়েত। আমফানে ক্ষতিগ্রস্তদের টাকা ঢুকে গেছে; তৃণমূল পঞ্চায়েত প্রধানের স্ত্রীর অ্যাকাউন্টে; এমনটাই অভিযোগ মানুষের।
ত্রাণ ও ক্ষতিপূরণ নিয়ে জেলায় কিছু মানুষ দুর্নীতি করতে পারেন; এমন আশঙ্কার কথা কয়েক আগেই নিজের ফেসবুকে ভিডিও পোস্টে বলেছিলেন; কৃষ্ণনগরের সাংসদ মহুয়া মৈত্র। সতর্ক করেছিলেন সবাইকে। আর ঠিক সেটাই হল। তাঁর দল তৃণমূলের তিন পঞ্চায়েত প্রধান এবং সেখানকার এক বিজেপি সদস্যের বিরুদ্ধে; ত্রাণে ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগ উঠল। ক্ষুব্ধ গ্রামবাসীরা এই খবর জানার পরেই; মঙ্গলবার পঞ্চায়েতে বিক্ষোভ দেখান। দুর্নীতির উপযুক্ত তদন্ত দাবি করেছেন তাঁরা।
আরও পড়ুনঃ চুরি শুরু, মমতার আমফান ক্ষতির টাকা পেলেন তৃণমূলের পাকা বাড়ির মালিকরা
শান্তিপুরের বেলগড়িয়া ১, বেলগড়িয়া ২ ও হরিপুর পঞ্চায়েত। সবচেয়ে বেশি দুর্নীতি হয়েছে; এই পঞ্চায়েত গুলিতেই, এমনটাই অভিযোগ। বেলগড়িয়া ২ পঞ্চায়েতে আবার অদ্ভুত কাণ্ড। রাজ্য সরকার জানিয়েছিল; ক্ষতিগ্রস্তদের টাকা সরাসরি তাদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে পাঠানো হবে। তারপরে, বিভিন্ন পঞ্চায়েত এবং পুরসভা; ক্ষতিগ্রস্তদের নামের তালিকা তৈরি করে স্থানীয় প্রশাসনের কাছে জমা দেয়।
গ্রামবাসীদের অভিযোগ, তাঁদের এলাকার যে ২০ জনের নামের তালিকা পাঠানো হয়েছে; তাঁদের মধ্যে প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্ত ছাড়াও রয়েছেন; খোদ পঞ্চায়েত প্রধান দীপক মণ্ডলের স্ত্রী পদ্মা মণ্ডল; ও উপ-প্রধান বিপ্লব প্রামাণিকের কয়েকজন ঘনিষ্ঠ। এ ছাড়াও রয়েছেন পঞ্চায়েতের এক বিজেপি সদস্যের; পরিবারের লোকজনও। অভিযোগ, ঝড়ে এঁদের তেমন কোনও ক্ষতিই হয়নি; তাও এঁদের অ্যাকাউন্টে টাকা ঢুকেছে।
আরও পড়ুনঃ মহামারী থেকে দেবীতে পরিণত হল করোনা
শান্তিপুরের তৃণমূল বিধায়ক অরিন্দম ভট্টাচার্য বলেন; ‘‘যদি কোনও দুর্নীতি হয়ে থাকে; সে ক্ষেত্রে প্রশাসন সঠিক পদক্ষেপ করবে; এ ব্যাপারে সবাই আশ্বস্ত থাকতে পারেন’’। আর রানাঘাটের বিজেপি সাংসদ জগন্নাথ সরকার বলেছেন;, ‘‘তৃণমূলের লোকজন এ সব করে নিজেরাই লুটেপুটে খাচ্ছে। এর মধ্যে আমাদের কাদের নাম, কেন আছে; তাঁরা প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্ত কিনা, তা খোঁজ নিয়ে দেখছি’’। রানাঘাটের মহকুমাশাসক হরসিমরন সিং বলেন; ‘‘সঠিক মানুষ যাতে ক্ষতিপূরণ পান; তা দেখা হবে। বিডিওকে বলেছি বিষয়টি দেখতে’’।
আরও পড়ুনঃ কেরালা আনারস বোমায় হাতি মারার ঘটনা, গ্রেফতার আমজাথ আলি ও তাহমিম শেখ, শুরু বিতর্ক
ক্ষতিপূরণের টাকা স্ত্রীয়ের অ্যাকাউন্টে; এবং আরও কয়েকজন ঘনিষ্ঠের অ্যাকাউন্টে; ঢোকার কথা মেনে নিয়েছেন তৃণমূল পঞ্চায়েত প্রধান দীপক মণ্ডল। তিনি যুক্তি দিয়েছেন; ‘‘আমাদের ব্লকে; ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্তের সংখ্যা অনেক বেশি। সে জন্য আমরা স্থির করি, পরিচিত কয়েকজনের অ্যাকাউন্টে; এই টাকা জমা রেখে পরে তা আরও বেশি সংখ্যক ক্ষতিগ্রস্তের মধ্যে ভাগ করে দেব’’।
কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে; বউ ও আত্মীয়দের অ্যাকাউন্টে এই টাকা রাখার সিদ্ধান্ত; তিনি নিজের থেকে কী করে নিতে পারেন? কী করেই বা সরকারের অনুমতি না নিয়ে; বা প্রশাসনকে না জানিয়ে এমন সিদ্ধান্ত নিলেন তিনি? সব দুর্নীতি; জানিয়েছেন বিক্ষোভরত ক্ষতিগ্রস্থ মানুষরা। শান্তিপুরের বেলগড়িয়া ১, বেলগড়িয়া ২ ও হরিপুর পঞ্চায়েতে; তৃণমূলের গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধানদের বিরুদ্ধে রীতিমত পোষ্টার পড়েছে আমফান দুর্নীতি নিয়ে।