The News বাংলা, মুম্বই: দেবিকা রোতওয়ান, বয়স তখন মাত্র ৯। পুণে যাওয়ার জন্য সেদিন মুম্বইয়ের ছত্রপতি শিবাজি টারমিনাস স্টেশনে অপেক্ষা করছিল দেবিকা রোতওয়ান ও তার পরিবার। হঠাৎই গুলির শব্দ, তারপরেই চারিদিকে রক্ত আর রক্ত। দেবিকা দেখেছিল, একটা ছেলে পিঠে ব্যাগ নিয়ে সবাইকে গুলি করে মারছে। একটা গুলি এসে লেগেছিল তার পায়েও। ছ-ছটি অস্ত্রোপচারের পর সে সুস্থ হয় ঠিকই, কিন্তু পিঠে ব্যাগ নেওয়া সেই সন্ত্রাসবাদী আজমল কাসভকে চিনিয়ে দেওয়ার ‘শাস্তি’ বয়ে বেড়াতে হচ্ছে আজও।
আরও পড়ুনঃ আন্দামান নর্থ সেন্টিনেলে ‘জাড়োয়া’দের তীরের মুখে ভারতীয় কমান্ড্যান্ট

দিনটা ছিল ২৬ নভেম্বর, ২০০৮। ঠিক ১০ বছর আগের ঘটনা। মুম্বইয়ের ছত্রপতি শিবাজি টারমিনাস স্টেশনে হামলাকারী জঙ্গি কাসভকে শনাক্ত করেছিল দেবিকা। সেই সময়ে মাত্র ৯ বছরের ছোট্ট মেয়ে দেবিকা রোতওয়ান। তাঁর শনাক্তকরণের উপর ভিত্তি করেই শাস্তি দেওয়া হয় এই ভয়ঙ্কর জঙ্গিকে।

বলাবাহুল্য, দেশের জন্য এক বিরাট কাজ ছিল সেটা। প্রাপ্য শাস্তি পেয়েছে কাসভ। কিন্তু সেই গর্ব ধুয়ে-মুছে শেষ হয়ে যাচ্ছে দেবিকার জীবনে। কাসভকে চিনিয়ে দেওয়ার ‘শাস্তি’ আজও বয়ে বেড়াচ্ছে দেবিকা।
আরও পড়ুন: অসুস্থ শিল্পীকে ‘বঙ্গরত্ন’ দেওয়ার দাবী নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর দ্বারস্থ ছাত্রছাত্রীরা

সবাই ধরে নিল সন্ত্রাসবাদীদের প্রত্যাঘাতের মুখে পড়তেই হবে দেবিকাকে। কোনও না কোনও দিন তারা কাসভের শাস্তির বদলা নিয়ে হামলা করবে দেবিকার উপর। সেই ভয়ে ধীরে ধীরে সকলেই সম্পর্ক ছিন্ন করলেন তাঁদের সঙ্গে। ভয়, বুঝি তাঁদের জঙ্গি রোষে পড়তে হয়।

দেবিকার বাবার রমরমা ফলের ব্যবসা ছিল। বন্ধ করে দিতে হল সেই দোকান। কারণ, ছোট দোকানদাররা আর কেউ কিনতে চাইলেন না ফলমূল। যদি বোমা ফাটে, যদি গুলি চলে, যদি তারাও টার্গেট হয়ে যায়। বিলাসবহুল বান্দ্রা থেকে বাড়ি সরিয়ে নিয়ে যেতে হয় অন্য জায়গায়। এমনকী নিজের দাদার বিয়েতেও যেতে পারেনি দেবিকা।
আরও পড়ুন: ‘শব্দের জন্য’ ট্র্যাজিক জীবন ভারতীয় সিনেমার জনকের

কেউ স্কুলে ভর্তি করতে চাইল না দেবিকাকে। তার জন্য নাকি গোটা স্কুলের ভয়, যদি জঙ্গি হামলা হয়! অবশেষে অনেক চেষ্টার পর ভর্তি হতে পারলেও শুনতে হল নানা কুকথা। কেউ তাকে ডাকলো, ‘কাসভের মেয়ে’ বলে, কেউ বলত ‘কাসভওয়ালি’।
অনেক কষ্টে একটি দোকানে চাকরি জোটালেন তার বাবা। দেবিকা এখন দশম শ্রেণির ছাত্রী। দুচোখে স্বপ্ন, বড় হয়ে আইপিএস অফিসার হবে সে। দেশকে রক্ষা করবে। কিন্তু, এখন সমাজের লড়াইতে জেতাটাই তার কাছে সব চেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ ‘কাসবের বেটির’।
ছোট্ট মেয়েটির সাহসিকতা দেখে সেদিন অবাক হয়েছিলেন দুঁদে আইপিএস-রাও। ভয় পায় নি একরত্তি মেয়েটি। ক্রাচে ভর করে খুঁড়িয়ে এসে একনজরেই চিনিয়ে দিয়েছিল জঙ্গী আজমল কাসভকে। তার জেরেই ফাঁসি হয়ে যায় সন্ত্রাসবাদী কাসভের।
আরও পড়ুন: স্বাধীনতার পর প্রথম মুসলিম মেয়র পেল মমতার কলকাতা
সেই সাহসী দেশপ্রেমিক মেয়েটিকে আজ ‘জঙ্গীর মেয়ে’ বা কাসভওয়ালী’ বা ‘কাসভের মেয়ে’,’কাসব কি বেটি’ বলে ডাকা হয়। অদৃষ্টের কি পরিহাস। ভারতেই মনে হয় এটা সম্ভব। “মেরা ভারত মহান”।