জেনে নিন শীতে ত্বকের যত্ন কিভাবে নেবেন

588
ত্বকের যত্ন নিন/The News বাংলা
ত্বকের যত্ন নিন/The News বাংলা

The News বাংলাঃ আপনার ত্বক কি প্রকৃতিগত ভাবেই শুষ্ক? আপনার বয়স কি তিরিশ পেরিয়েছে? আপনি কি দিনের মধ্যে বেশিরভাগ সময়টাই শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কামরায় কাটান? তা হলে কিন্তু আগামী কয়েকটা মাস আপনাকে একটু বাড়তি সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে, না হলে ত্বকের শুষ্কতা খুব ভোগাবে।

মনে রাখবেন, বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আপনার ত্বক ক্রমশ আর্দ্রতা হারাবে, তাই বিশেষ যত্নআত্তি না পেলেই দেখা দেবে বলিরেখা। বয়সের আগেই ত্বকে ভাঁজ পড়বে, তা কুঁচকে যেতেও পারে৷ আশার কথা হচ্ছে, সামান্য একটু সচেতন হলেই কিন্তু এই সমস্যার হাত থেকে নিজেকে বাঁচানো সম্ভব। কি কি করবেন, জেনে নিন।

শুষ্ক ত্বকের হাত থেকে বাঁচতে পর্যাপ্ত জলপান করুন:
শরীর ভিতর থেকে আর্দ্র না হলে তার ছাপ পড়বে ত্বকের উপর। তাই পর্যাপ্ত পরিমাণে জলপান করুন৷ দিনে অন্ততপক্ষে আট-দশ গ্লাস জলপান করা একান্ত আবশ্যক৷ ডাবের জল, ফলের রসও পান করতে পারেন।

অলিভ অয়েল:
অলিভ অয়েল সাধারণত সব ধরনের ত্বকের পক্ষেই খুব কার্যকর। এর মধ্যে উপস্থিত ফ্যাটি অ্যাসিড ও অ্যান্টি অক্সিডান্ট শুধু আপনার মুখ নয়, পুরো শরীরের ত্বকের যত্ন নেয়৷ স্নানের আধ ঘণ্টা আগে মুখে ও পুরো শরীরে অলিভ অয়েল মেখে নিন। তার পর হালকা গরম জলে স্নান সেরে লাগিয়ে নিন ময়েশ্চরাইজ়ার৷

অলিভ অয়েল, ব্রাউন সুগার, আর মধু এমন অনুপাতে মিশিয়ে নিন যেন ঘন ক্রিমের মতো একটি উপাদান তৈরি হয়, তারপর হালকা হাতে সর্বাঙ্গে মেখে নিন এই মিশ্রণটি। অল্প চাপ দিয়ে গোল গোল করে মালিশ করুন, এতে আপনার শরীরের সমস্ত মৃত কোষ উঠে যাবে। তারপর স্নান করে হালকা ময়েশ্চরাইজ়ার লাগিয়ে নিন।
দুধ ও দইয়ের ল্যাকটিক অ্যাসিড শুষ্ক ত্বকের পক্ষে খুব ভালো

দুধ/দই:
রুক্ষ, শুষ্ক, ফাটা ত্বকে অনেক সময়েই জ্বালা বা চুলকানির মতো সমস্যাও দেখা যায়। তেমন হলে এক লিটার ঠান্ডা দই বা দুধে নরম কাপড় বা তুলো ভিজিয়ে নিন সর্বাঙ্গে লাগান। অন্তত পাঁচ মিনিট এই প্রলেপটি ব্যবহার করুন। তাতে ত্বকের জ্বালাভাব দূর হবে। দই বা দুধে উপস্থিত ল্যাকটিক অ্যাসিডের প্রভাবে ঝলমলিয়ে উঠবে আপনার ত্বক। কাঁচা দুধের সঙ্গে মধু মিশিয়ে নিন। তার পর সেটি আপনার গোটা শরীরে লাগিয়ে নিন স্নানের আগে। দই দিয়েও এই লেপটি তৈরি করা যায়। প্রলেপটি শুকিয়ে গেলে ধুয়ে ফেলুন ও স্নান করে নিন।

অ্যালো ভেরা:
অ্যালো ভেরা এমনই একটি উদ্ভিদ, যা টবে লাগালে খুব সহজেই বেড়ে ওঠে। একটি অ্যালো ভেরা পাতা নিন, মাঝখান থেকে কেটে ফেলুন সেটিকে। শাঁসটা বের করে নিয়ে ত্বকে লাগিয়ে নিন। জ্বালাভাব, চুলকানি মুহূর্তে কমে যাবে। সেরে যায় ছোটখাটো ইনফেকশনও। আর্দ্রতা জোগানোর পাশাপাশি এই শাঁস বা জেলের পরত আপনার ত্বকের উপর তৈরি করে রাখে সুরক্ষার আবরণ, তাতে দূষণ আপনার ত্বকে কোনও ছাপ ফেলতে পারে না।

নারকেল তেল:
মুখ ও শরীরের ত্বকের পাশাপাশি গোড়ালি, হাঁটু, কনুইয়েরও বিশেষ খেয়াল রাখা প্রয়োজন, বিশেষ করে শীতকালে। না হলে এগুলি রুক্ষ ও কালো হয়ে যায়। প্রথমে এই অংশের ত্বক ভিজিয়ে রাখুন জলে। ত্বক যখন কুঁচকে যাবে, তখন বুঝবেন তা যথেষ্ট আর্দ্রতা পেয়েছে। নারকেল তেল সাধারণত শীতকালে জমে যায়। জমা তেলের মোটা পরত লাগিয়ে নিন আর্দ্র ত্বকে। তার পর মোজা বা লম্বা হাতা টপ বা পাজামা পরে ঘুমোতে যান। টানা বেশ কয়েকদিন করলে নিজেই ফারাকটা বুঝতে পারবেন।

ওটমিল:
আজ বলে নয়, বহু হাজার বছর ধরে ত্বকের পরিচর্যায় ব্যবহৃত হচ্ছে ওটমিল। সবচেয়ে ভালো কাজে দেবে ইনস্ট্যান্ট ওট, সেটাকে ব্লেন্ডারে দিয়ে প্রথমে পাউডারের মতো গুঁড়ো করে নিন। তার পর স্নানের বাথটবে জল ভরে এক কাপ এই পাউডার দিয়ে ভালো করে ছড়িয়ে দিন হাত দিয়ে। দেখে নেবেন যেন নিচের দিকে দলা পাকিয়ে না থাকে। তার পর এই জলে ১৫-২০ মিনিট শুয়ে থাকুন। ওটমিল ত্বক পরিষ্কার করে, আর্দ্রতা জোগায়। এর মধ্যে উপস্থিত অ্যান্টিঅক্সিডান্ট বজায় রাখে উজ্জ্বলতা।

কমলালেবু:
কমলালেবুতে উপস্থিত ভিটামিন সি ঠেকিয়ে রাখে বলিরেখা। কমলালেবুর খোসা, সরবাটা, ময়দা বা বেসনের প্রলেপের ব্যবহার রূপটান হিসেবে বহুদিন প্রচলিত। এই শীতে যত কমলালেবু খাবেন, তার খোসা ফেলবেন না। সব রোদে শুকনো করে রেখে দিন। পরে গুঁড়ো করে ব্যবহার করতে পারবেন।

মেয়োনিজ়:
শুনতে একটু অদ্ভুত লাগলেও মেয়োনিজ় কিন্তু ত্বকের আর্দ্রতা ফিরিয়ে আনতে দারুণ কার্যকর। তবে মেয়োনিজ়ে সাধারণত নুন, গোলমরিচ, মাস্টার্ড পাউডার ইত্যাদি যোগ করা হয় স্বাদ বাড়ানোর জন্য। এই জিনিসগুলি যোগ করার আগে খানিকটা তুলে রেখে দিন মাস্ক হিসেবে ব্যবহারের জন্য। তা না হলে ত্বকে প্রতিক্রিয়া দেখা দেবে। ডিমের কুসুম আর তেল ব্লেন্ড করে যে মেয়োনিজ় তৈরি হয়, তার সঙ্গে খানিকটা বেবি অয়েল মিশিয়ে নিন। তার পর মুখে, ঘাড়ে, কনুইয়ে, হাতে লাগিয়ে নিন স্নানের আগে। ডিমের গন্ধটা একটু কড়া, সেটা সহ্য করে নিতে পারলে এই প্যাকের কোনও জবাব নেই।

মধু ও পাকা কলা:
পাকা কলা ও মধু একসঙ্গে ব্লেন্ড করে নিন। মুখে লাগান প্রলেপের মতো করে, তার পর ২০-২৫ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলুন ও ময়েশ্চরাইজ়ার লাগান। এটি নিয়মিত ব্যবহারের ফলে ত্বক পাবে প্রয়োজনীয় আর্দ্রতা, তা হয়ে উঠবে নরম ও কোমল। পাকা কলা, মধু আর সরের প্রলেপও শুষ্ক ত্বকের খুব ভালো দাওয়াই হতে পারে। মধু অন্য নানা প্যাকের সঙ্গেও নিশ্চিন্তে ব্যবহার করতে পারেন।

আমন্ড তেল:
আমন্ড তেলে প্রচুর ভিটামিন ই থাকে এবং তা আপনার ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ায় ও ত্বককে করে তোলে মসৃণ। ত্বক খুব সহজেই এই তেল শুষে নেয়, কিন্তু চটচটানি অনুভূত হয় না। অ্যালো ভেরা জেলের সঙ্গে কয়েক ফোঁটা আমন্ড তেল আর মধু মিশিয়ে প্যাক তৈরি করে নিন। মুখে লাগিয়ে ১৫-২০ মিনিট অপেক্ষা করে সামান্য গরম জলে ধুয়ে ফেলুন।

অ্যাভোকাডো:
অ্যাভোকাডোতে উপস্থিত প্রাকৃতিক তেল ত্বকের শুষ্কতা দূর করে এবং তা নরম ও কোমল হয়ে ওঠে৷ সেই সঙ্গে যদি খানিকটা মধু মিশিয়ে প্যাক তৈরি করেন, তা হলে আরও ভালো ফল পাবেন৷

চকোলেট:
চকোলেটে উপস্থিত ক্যাফেইন থেকে ত্বকে আসে উজ্জ্বলতা। সেই সঙ্গে চকোলেটের ফ্যাটও ময়েশ্চরাইজ়ার হিসেবে ভালোই কাজ করে। ডার্ক চকোলেট গলিয়ে নিন মাইক্রোওয়েভ ওভেনে। হালকা গরম থাকতে থাকতে তার সঙ্গে মধু মিশিয়ে ফেস প্যাক বানিয়ে নিন। মুখে, গলায়, ঘাড়ে, হাতে তা লাগিয়ে ১৫ মিনিট অপেক্ষা করুন। চোখের নিচ আর ঠোঁটের আশপাশের অংশে যেন প্যাক না লাগে সেদিকে নজর রাখবেন। তারপর সার্কুলার মোশনে হাত ঘুরিয়ে ম্যাসাজ নিন মুখে, সামান্য গরম জলে ধুয়ে ময়েশ্চরাইজ়ার লাগান।

Comments

comments

আপনাদের মতামত জানাতে কমেন্ট করুন