৫ টি প্রধান কারনে ৫ রাজ্যে হার মোদীর বিজেপির

1028
৫ টি প্রধান কারনে ৫ রাজ্যে হার মোদীর বিজেপির/The News বাংলা
৫ টি প্রধান কারনে ৫ রাজ্যে হার মোদীর বিজেপির/The News বাংলা

The News বাংলা, নিউ দিল্লী: কি কি কারণে ৫ রাজ্যে শেষ মোদী ম্যাজিক? সবটার জন্যই কি রাজ্য সরকার বা রাজ্যের বিজেপি নেতারা দায়ী? বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নরেন্দ্র মোদীর ভুল নীতিও এই ভোটে মানুষকে বিজেপির বিরুদ্ধে ভোট দিতে বাধ্য করেছে। কি কি কারণে হার বিজেপির? কি বলছেন ভোট বিশেষজ্ঞরা?

আরও পড়ুনঃ Result Live: মোদীকে হারালেন রাহুল, ৫ রাজ্যেই ধরাশায়ী বিজেপি

৫ রাজ্যে বিজেপির হারার প্রধান ৫ টি কারণঃ

১. “নোটবন্দী”। ৫ রাজ্যে বিজেপির এই হারের প্রধান কারণ নোটবন্দী। ২০১৭ নভেম্বরে হঠাৎ করেই ৫০০ আর ১০০০ টাকার নোট অচল বলে ঘোষণা করে দেওয়ার প্রায় নয় মাস পরে জানা যায় বাতিল হয়ে যাওয়া প্রায় সব নোটই রিজার্ভ ব্যাঙ্কের কাছে ফিরে এসেছে।

নোটবাতিলের ঘোষণার সময়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং তারপরে সব বিজেপি নেতা মন্ত্রীই দাবী করেছিলেন যে অর্থনীতিতে তিন লক্ষ কোটি টাকার জাল এবং কালো টাকা ঘুরছে। নোটবন্দীর পরে সেই কালোটাকা আর জাল নোট উদ্ধার করা সম্ভব হবে।

সেই টাকা ব্যাঙ্কের কাছে আর ফেরত আসবে না,এমনটাও দাবী করা হয়েছিল। অথচ দেখা গেল চালু থাকা নোটের প্রায় ৯৯ শতাংশই ফিরে এসেছে। রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়ার বার্ষিক রিপোর্টে এই তথ্য দেওয়ার পরই হতাশ হন ভারতবাসী।

আরও পড়ুনঃ লোকসভার আগে রাহুলের কাছে মোদীর হার, পড়ল টাকার দাম

২. “আচ্ছে দিন”। না আচ্ছে দিন আসে নি। কোথাও কৃষক আত্মহত্যার রেশ কমে নি। শেষ ৩ বছরে প্রায় ১৫০০ কৃষক আত্মহত্যা করেছেন বলেই অভিযোগ। কৃষকদের ঋণ মকুব হয় নি। কৃষিঋণ মকুবের দাবিতে বিভিন্ন রাজ্যে কৃষক বিক্ষোভে মোদী সরকার বেশ বড় রকমের ধাক্কা খেল। পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, ২০১৯ সালের সাধারণ নির্বাচনেও এর এর প্রভাব পড়বে।

কৃষিঋণ মকুবের দাবিতে কৃষক বিক্ষোভের আগুন ছড়িয়েছিল বিজেপি-শাসিত মধ্যপ্রদেশে। সেখানে বিক্ষোভ থামাতে গিয়ে মন্দসৌরে পুলিশের গুলিতে মারা যান পাঁচজন কৃষক। রাজ্যে কৃষক আত্মহত্যার হার অনেক বেশি। এর আঁচ ছড়িয়ে পড়ে উত্তরপ্রদেশ, মহারাষ্ট্র, গুজরাট, রাজস্থান, তেলেঙ্গানা, পাঞ্জাব সহ অন্যান্য রাজ্যগুলিতেও। নিখিল ভারত কিষাণ সভার নেতৃত্বে কৃষক সংগঠনগুলি দিল্লিতে বিক্ষোভও দেখায়৷

মানুষ মেনে নেয় নি জিএসটি-ও। ছোট ও মাঝারি শিল্পপতিরা এখনও ধুঁকছে। পরিকল্পনা ছাড়াই জিএসটি চালু, মত অর্থনীতিবিদদের।

আরও পড়ুনঃ মোদী সরকারের সঙ্গে বনিবনা না হওয়ায় পদত্যাগ রিজার্ভ ব্যাঙ্ক গভর্নরের

৩. “কর্মসংস্থান”। ২০১৪ সালে যে প্রতিশ্রুতি দিয়ে মোদী ক্ষমতায় এসেছিলেন তার প্রধান ছিল কর্মসংস্থান। কিন্তু এই ৫ বছরে বেকার সমস্যা আরও বেড়েছে ভারতের সব রাজ্যেই। বেকার যুবকরা মুখ ফিরিয়েছে বিজেপির দিক থেকে।

গত লোকসভা নির্বাচনের আগে বি জে পি-র প্রধানমন্ত্রী প্রার্থী নরেন্দ্র মোদী দেশের প্রায় প্রতিটি রাজ্যে এক বা একাধিক জনসভা করে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন ক্ষমতায় এলে তিনি বছরে ২ কোটি চাকরির ব্যবস্থা করবেন। ৫ বছরে ২ লাখ হয়েছে কিনা সে নিয়ে সন্দেহ সবার।

বছরে ২ কোটি চাকরি তো দূরের কথা, ২ লক্ষ চাকরির বন্দোবস্তও করতে পারেনি মোদী, এমনটাই অভিযোগ। তাই ক্ষমতায় আসার পর বছরখানেক মেক ইন ইন্ডিয়া, স্কিল ইন্ডিয়া, স্টার্ট আপ ইত্যাদি নানান ধরনের রকমারি প্রকল্প ঘোষণা করে বাজার গরম করা হলেও, বাস্তবে নতুন করে কোনো কর্মসংস্থান তৈরি হয়নি।

উলটে বিদেশি পুঁজি তথা কর্পোরেট বান্ধব পদক্ষেপ নেবার ফলে পুরানো কর্মসংস্থানেরও অবলুপ্তি ঘটতে থাকে। বেগতিক বুঝে গত এক-দেড় বছরে ভুলেও আর কর্মসংস্থানের কথা উচ্চারণ করছেন না নরেন্দ্র মোদী। দলীয় এবং সরকারি অনুষ্ঠানে সন্তর্পণে এড়িয়ে যাচ্ছেন চাকরি দেবার প্রতিশ্রুতির কথা। ‘মন কি বাত’ অনুষ্ঠানে মন ভোলানোর হাজারো গল্পকথা শোনানো হলেও, বেকারদের জন্য চাকরির বিষয়টি উহ্যই থেকে যায়।

আরও পড়ুনঃ মোদী সরকারের সাফল্য, বিজয় মালিয়াকে ভারতে ফেরতের নির্দেশ ব্রিটিশ আদালতের

৪. “ব্যাংক নীতি”। মোদীর আমলে ব্যাঙ্কিং পরিষেবা শেষ করে দেওয়া হয়েছে বলেই অভিযোগ। নোট বাতিল থেকে শুরু করে ব্যাঙ্ক থেকে দিনে কুড়ি হাজার টাকার বেশি তোলা যাবে না, মেনে নেয় নি ভারতের আমজনতা। ব্যাঙ্কের সুদ কমেছে। অসহায় অবস্থা সিনিয়ার সিটিজেনদের। ব্যাঙ্কে নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা না রাখলে জরিমানা বাবদ টাকা কেটে নেওয়া হচ্ছে, যা ক্ষোভ বাড়িয়েছে গরীব মানুষের।

অন্যদিকে বিজয় মালিয়া, ললিত মোদী, নীরব মোদি ও তার মামা গীতাঞ্জলি গ্রুপের কর্ণধার মেহুল চোকসি আমজনতার টাকা নিয়ে দুর্নীতি করে যেভাবে মোদী সরকারের নজর এড়িয়ে বিদেশে পালিয়েছে তা সরকারকে বেশ বিব্রত করেছে। বিরূপ প্রভাব ফেলেছে জনগণের মনে।

আরও পড়ুনঃ রাহুলের ‘রাফায়েল’ অ্যাটাকের জবাবে মোদীর হাতে ‘মাইকেল’

৫. “দূর্নীতি”। ‘রাফায়েল দুর্নীতি’ মানুষকে আশাহত করেছে বিজেপির প্রতি, মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। ২০১৪ সালে যে চুক্তি প্রায় চূড়ান্ত হয়েছিল, তাতে মোট খরচ পড়ত ৭৯ হাজার ২০০ কোটি টাকা। যুদ্ধবিমান আসত ১২৬টি। সেই চুক্তিতে রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা হ্যালও উপকৃত হতো। বিজেপি আমলের এই চুক্তিতে বিমান আসবে ৩৬টি, খরচ ৫৮ হাজার কোটি টাকা।

মোদীর নতুন চুক্তিতে রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা হ্যালের কোনো ভূমিকাও এখানে থাকছে না। মোদীর ছোঁয়ায় ‘কাট মানি’ খাবার সুযোগ পেয়েছে আম্বানি গোষ্ঠী, অভিযোগ বিরোধীদের। কংগ্রেস আমলের চুক্তিতে বিমানপ্রতি খরচ পড়ত ৬২৯ কোটি টাকা, বিজেপির চুক্তিতে খরচ পড়ছে ১ হাজার ৬১১ কোটি। কংগ্রেস হিসাব করে দেখিয়ে দিয়েছে, ৬২৯ কোটি টাকাতে ৩৬টি রাফায়েল কিনলে খরচ যেখানে ২২ হাজার ৬৪৪ কোটি হতো, সেখানে বিজেপি সরকার ওই ৩৬টি বিমানের জন্য দিচ্ছে প্রায় ৫৮ হাজার কোটি! অর্থাৎ আড়াই গুণেরও বেশি!

আরও পড়ুনঃ বাংলায় ২৫ টাকা কেজি পেঁয়াজ, নাসিকে দাম না পেয়ে আত্মহত্যা

রাফাল যুদ্ধবিমানের পর কয়লা আমদানি নিয়েও বিজেপির বিরুদ্ধে ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য ইন্দোনেশিয়া থেকে যে কয়লা আমদানি করা হয়েছে, সেখানে অতিরিক্ত দাম দেখানো হয়েছে। রাফালের মতোই এখানেও বন্ধু ব্যবসায়ীদের বাঁচাতে বিজেপি চেষ্টা করছে বলেই অভিযোগ। ৩৫ হাজার কোটি টাকা কেলেঙ্কারির এই ঘটনা নিয়ে শুরু হয় জল্পনা। স্পেশাল ইনভেস্টিগেশন টিম গঠন করে এই ঘটনা সামনে আনার জন্য আবেদনও জানায় কংগ্রেস।

সব মিলিয়ে মোদী সরকারের বিভিন্ন নীতিই বিজেপির এই ভরাডুবির জন্য দায়ী বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। মানুষের এই ক্ষোভ বজায় থাকলে আর কংগ্রেসের নেতৃত্বে বিরোধী জোট এককাট্টা হতে পারলে, আগামী লোকসভা নির্বাচন যে নরেন্দ্র মোদী ও অমিত শাহের পক্ষে আরও দুঃসহ হতে চলেছে তা বলাই যায়।

Comments

comments

আপনাদের মতামত জানাতে কমেন্ট করুন