হৃদরোগ কি করে বুঝবেন, কি করবেন কি করবেন না

687

নিজস্ব পরামর্শদাতা: বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে হার্ট অ্যাটাকের প্রবনতা বাড়বে, এটা এখন অতীত। এখন তো ১৬ বছরের কিশোরেরও হৃদরোগ হচ্ছে। হৃদরোগ সংক্রান্ত কিছু সাধারণ উপদেশ জেনে নিন। মেনে চলতে থাকলে হার্ট অ্যাটাকের এর সম্ভাবনা অনেক কম থাকবে। আগেই জেনে নেওয়া দরকার, হৃদরোগের লক্ষ্যণগুলো কি কি ?

হৃদরোগের লক্ষণসমূহ:

* বুকে বা বাহুতে ব্যথা হৃদরোগের অন্যতম লক্ষণ। তবে শুধু বুকে ব্যথা হলেই হৃদরোগ বলা যায় না। বাহু, চোয়ালের পিছন দিক এবং গলায় চিনচিনে ব্যথা হতে পারে।

* অনেক সময় অনেকে বলে থাকেন বুকে জ্বালাপোড়া করার কথা। এমনটা হলে সাবধান হোন। কেননা এটিও হৃদরোগের অন্যতম লক্ষণ হতে পারে।

* বদহজম, বমিবমি ভাব, অনিয়মিত শ্বাস-প্রশ্বাস হৃদরোগের উপসর্গ হতে পারে।

* হৃদরোগে আক্রান্ত হলে ঘনঘন শ্বাস-প্রশ্বাস ওঠানামা করে। অনেক সময় রোগী ঘামতে থাকে। এমনটা প্রবল শীতেও হতে পারে।

* হৃদরোগ সবসময় হঠাৎ করে হবে এমনটা নয়। অনেক সময় হৃদরোগ ধীরে ধীরে মানুষের হৃদযন্ত্রকে ব্লক করে দেয়। এ ধরনের হৃদরোগকে ‘মায়োকার্ডিয়াল ইনফারকশন’ বা হার্ট অ্যাটাক বলে। এ ক্ষেত্রে প্রবল অস্বস্তিকর অনুভতি অন্যতম লক্ষণ।

হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্ত হলে তাৎক্ষণিকভাবে করণীয়:

* যদি কেউ হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্ত হন তাহলে প্রথমেই জরুরি বিভাগে ডাক্তার দেখাতে হবে। কারণ অভিজ্ঞ ডাক্তার ছাড়া কোনো চিকিৎসা করতে গেলে অনেক সময় রোগীর অবস্থা আরও খারাপ হয়ে পড়তে পারে।

* হার্ট অ্যাটাকের পরপরই রোগীকে শক্ত জায়গায় হাত-পা ছড়িয়ে শুইয়ে দিন এবং গায়ের জামা-কাপড় ঢিলেঢালা করে দিন।

* হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্ত ব্যক্তির শরীরে বাতাস চলাচলের রাস্তাগুলো সব উম্মুক্ত করে দিন। এটি রোগীকে গভীরভাবে শ্বাস-প্রশ্বাস নিতে সহায়তা করবে।

* হার্ট অ্যাটাকের পর যদি আক্রান্ত ব্যক্তির শ্বাস-প্রশ্বাস বন্ধ হয়ে যায় তাহলে তাকে কৃত্রিম উপায়ে শ্বাস-প্রশ্বাস চালুর চেষ্টা করুন।

* হার্ট অ্যাটাকের পর রোগীর যদি বমি আসে তাহলে তাকে একদিকে কাত করে দিন। যাতে সে সহজেই বমি করতে পারে। এতে ফুসফুসের মতো অঙ্গে বমি ঢুকে পড়া থেকে হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্ত ব্যক্তি রক্ষা পাবেন।

কি কি পরামর্শ মেনে চলবেন:

· সকল প্রকার তামাক এবং তামাকজাত দ্রব্য গ্রহন থেকে বিরত থাকুন।

· অতিরিক্ত তেল অথবা চর্বি যুক্ত খাবার গ্রহন থেকে বিরত থাকুন,স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহন করুন।

· আপনার খাদ্য তালিকায় তাজা শাকসব্জি এবং ফল অন্তর্ভুক্ত করুন।

· তরকারিতে পরিমিত লবন খান, খাবারে বাড়তি লবন মিশিয়ে খাওয়া বন্ধ করুন।

· চিনি বা মিষ্টি জাতীয় খাবার যত সম্ভব এড়িয়ে চলুন।

· ঘাম ঝরানো শারীরিক পরিশ্রম করুন, হাটার সময় দ্রুত হাটুন। সব সময় লিফট ব্যবহার না করে যতদুর সম্ভব সিড়ি বেয়ে উঠার অভ্যাস করুন।

· উচ্চরক্তচাপ বা হাইপারটেনশন (ব্লাড প্রেসার) এবং ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রনে রাখুন।

· শরীরের বাড়তি ওজন কমিয়ে ফেলুন এবং ওজন নিয়ন্ত্রনে রাখার চেষ্টা করুন।

· রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রিত রাখুন, লিপিড প্রোফাইল পরীক্ষাটি করে জেনে নিন আপনার রক্তে কোন ধরনের চর্বি বেশী আছে, সেই অনুযায়ী চিকিৎসা নিন এবং খাদ্য তালিকা তৈরী করুন।

· যাদের বাবা/মা বা বড় ভাই বোন দের (পারিবারিক) হৃদরোগ আছে তারা অতিরিক্ত সাবধানতা অবলম্বন করুন এবং নিয়মিত রক্তচাপ, রক্তের চর্বি, ডায়াবেটিস পরীক্ষা করে নিজের অবস্থান জেনে নিন।

· মানসিক চাপ থেকে মুক্ত থাকার চেষ্টা করুন, মানসিক চাপ হৃদরোগ ঘটায়। সৃষ্টিকর্তার উদ্দেশ্যে দৈনিক নিয়মিত প্রার্থনা করু্ন। সম্ভব হলে মেডিটেশন করে দেখতে পারেন।

· দৈনিক অল্প কিছু সময় শিশু এবং বয়োবৃদ্ধদের সাথে কাটানোর চেষ্টা করুন, বন্ধুদের সাথে প্রানখোলা আড্ডা মানসিক প্রশান্তি আনতে পারে। সব সময় হাসি খুশী থাকবার চেষ্টা করুন।

· দৈনিক পরিমিত নিদ্রা গ্রহন করুন, লক্ষ্য রাখুন আপনার দৈনন্দিন জীবনে যেন যথেষ্ট বিশ্রাম এবং বিনোদনের সূযোগ থাকে।

· ছোট শিশুদের গলা ব্যথা হলে বা বাতজ্বর হলে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

· করোনারি বা অন্যান্য জটিল হৃদরোগ হবার সুনির্দিষ্ট কোন বয়স নেই, তাই সব বয়সেই হার্টের যন্ত নেবার প্রতি সচেষ্ট হন। সন্দেহ হলে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হোন।

ভালো পরামর্শ মেনে চলুন। সুস্থ থাকুন।

Comments

comments

আপনাদের মতামত জানাতে কমেন্ট করুন