কাশীর কোতোয়াল, পুলিশ স্টেশনের হেড ইনচার্জ ভগবান কালভৈরব

2219
কাশীর কোতোয়াল, পুলিশ স্টেশনের হেড ইনচার্জ ভগবান কালভৈরব
কাশীর কোতোয়াল, পুলিশ স্টেশনের হেড ইনচার্জ ভগবান কালভৈরব

কাশীর কোতোয়াল; পুলিশ স্টেশনের হেড ইনচার্জ ভগবান কালভৈরব। থানার দায়িত্বে যখন ভগবান কালভৈরব; অপরাধী ও পাপীদের রেহাই নেই। উত্তরপ্রদেশের কাশী-বারাণসীর কোতোয়ালি পুলিশ স্টেশনের; হেড ইনচার্জ হলেন ভগবান কালভৈরব! থানার মুখ্য অফিসারের চেয়ারে রয়েছে কালভৈরবের মূর্তি; সাব-ইন্সপেক্টর বসেন তাঁর পাশের চেয়ারে! শুনতে আশ্চর্য লাগলেও ঘটনাটি সত্যি।

কাশীর কালভৈরব মন্দিরের ঠিক পিছনেই; বিশ্বেশ্বরগঞ্জ থানা। থানায় গেলে আপনি দেখতে পাবেন; মুখ্য-ভারপ্রাপ্ত অফিসারের চেয়ারে রাখা আছে ভগবান কালভৈরবের বাঁধানো ছবি। প্রতিদিন দেবতার পুজো করে, মালা পরিয়ে; শুরু হয় কোতোয়ালি থানার কাজ। পুলিশকর্মীরা বিশ্বাস করেন; ওই চেয়ারে বিরাজ করেন স্বয়ং প্রভু কালভৈরব। থানার SHO বা ‘স্টেশন হাউস অফিসার’; পাশের চেয়ারে বসে দায়িত্ব পালন করেন।

প্রথাটি এতটাই প্রাচীন যে; বেনারসের কোন পুলিশ অফিসারই ওই চেয়ারে বসার সাহস দেখান না। বরং এখানে এসে কালভৈরবের আশীর্বাদ নিয়েই; কাজ করেন তারা। কথায় আছে, কাশীর রাজা হলেন বিশ্বনাথ এবং কালভৈরব হলেন কাশীর নগরপাল বা কোতোয়াল। তাঁর অনুমতি ছাড়া কাশীতে বসবাস করা; বা বাবা বিশ্বনাথের দর্শন করা যায় না।

কিন্তু কে ছিলেন; এই কালভৈরব? ভৈরব শব্দটির অর্থ হল ভীষণ বা ভয়াবহ। ভগবান শিবের যে কয়টি অবতার আছে; তাদের মধ্যে সবচাইতে ভয়ঙ্কর এই কালভৈরব। কালভৈরব হলেন কাল বা সময়ের অধিপতি; বা মৃত্যুর দেবতা। তিনি পাপীদের দন্ড প্রদান করেন।

ব্রহ্মা একবার অহংকারের বশে; মহাদেবের নিন্দা করেছিলেন। ক্রোধিত হয়ে ব্রহ্মার অহং নাশ করতে; কালভৈরবকে পাঠিয়েছিলেন মহাদেব। যে মুখে ব্রহ্মা শিবনিন্দা করেছিলেন; ভীষণ রাগে সেই মুখটি ছিঁড়ে নেন কালভৈরব। কিন্তু ব্রহ্মার মুন্ড ছিঁড়ে নেওয়ায়; ব্রহ্মহত্যার পাপ এসে ধরে কালভৈরবকে। একারণে মাথাটি ছিঁড়ে নিলেও; সেই ছিন্ন মস্তক আটকে থাকে কালভৈরবের হাতেই। প্রচন্ড যন্ত্রনায় কালভৈরব ত্রিভুবনে ছুটে বেড়ান; কিন্তু কোনভাবেই যন্ত্রনার উপশম হচ্ছিল না। অবশেষে কাশীর গঙ্গায় হাত ডোবাতেই; কালভৈরবের হাত থেকে খসে পড়ে মুণ্ডু। শাপমোচন ঘটে তাঁর এবং যন্ত্রনার উপশম হয়। মহাদেবের আশীর্বাদ নিয়ে তখন থেকেই; কাশীতে প্রতিষ্ঠা লাভ করেন কালভৈরব।

আজও কাশীতে বাস করতে হলে অথবা বাবা বিশ্বনাথ এবং মা অন্নপূর্ণার দর্শন করতে হলে সবার আগে কালভৈরবের অনুমতি নিতে হয়। কাশীর ‘ল-এন্ড-অর্ডার’ এখনও তিনিই সামলান।

Comments

comments

আপনাদের মতামত জানাতে কমেন্ট করুন