এইভাবে ভাঙন বোধহয় পৃথিবীর কোন রাজনৈতিক দলে দেখা যায়নি; ঠিক এখন যেভাবে বাঁধ ভেঙে পড়ার মত ভাঙছে তৃণমূল কংগ্রেস। জনপ্রিয়তার তুঙ্গে বাংলায় ক্ষমতা লাভ করেছিল; মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তৃণমূল। বাংলার প্রতিটা মানুষ আস্থা রেখেছিল; মা-মাটি-মানুষের দলের প্রতি। ৩৪ বছরের সিপিএম শাসনের অবসান ঘটিয়ে; ক্ষমতা লাভ করে মমতা হয়ে উঠেছিল; বাংলার অগ্নিকন্যা। তারপর মাত্র সাড়ে ন’বছর! এর মধ্যেই বাংলায় শেষ মমতা ম্যাজিক; তছনছ মমতার তৃণমূল কংগ্রেস। বিধানসভা ভোটের আগেই; প্রতিদিন লাইন দিয়ে দল ছাড়ছেন তৃণমূলের মন্ত্রী-নেতা-কর্মীরা। যেভাবে প্রতিদিন বাংলার প্রতিটি জেলার নেতারা পদত্যাগ করছেন তৃণমূল কংগ্রেস থেকে; তাতে মানুষের প্রশ্ন উঠছে; আদৌ একুশের ভোট পর্যন্ত টিকবে তো মমতার তৃণমূল সরকার?
বহুদিন ধরেই তৃণমূলের অন্দরে; নেতাদের ক্ষোভের বন্যা বইছে। বিভিন্ন দিক থেকে বিভিন্ন সমস্যা ঘিরে ধরেছে দলকে। দলের মধ্যে বিরোধের কারণ হিসাবে; যে তিনটি নাম উঠে আসছে; তা হল অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়; ফিরহাদ হাকিম ও পিকে। এই তিনজনের বিরুদ্ধেই দলের একাংশের ক্ষোভ। কিন্তু মুখ খুললে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কোপ পড়তে হতে পারে; সেই ভয়ে এতদিন মুখে কুলুপ এঁটেছিলেন তৃণমূলের সর্বস্তরের নেতাও; কর্মী; বিধায়ক তথা মন্ত্রীরা।
আরও পড়ুনঃ মমতার পরামর্শদাতা পিকের হাতেই দলের ভা’ঙন, র’হস্য দানা বাঁধছে তৃণমূলের অন্দরে
প্রথম মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও তৃণমূল কংগ্রেসের বিপক্ষে গিয়ে; নন্দীগ্রাম আন্দোলনের জন নেতা শুভেন্দু অধিকারী নিজের অনুগামীদের নিয়ে জনসভা শুরু করেন। ক্রমে তিনি মন্ত্রিত্ব; বিধায়কপদ ও দল ছাড়েন। শুভেন্দু অধিকারীর মন্ত্রিত্ব ছাড়ার পর থেকেই দলে ভাঙনের ছাপ স্পষ্ট হতে থাকে। তাঁর দেখাদেখি মুখ খুলতে শুরু করেন; আরও অনেকেই। তৃণমূলের দলীয় কোন্দল প্রকাশ্যে চলে আসে।
আরও পড়ুনঃ শুভেন্দুর যোগদানের জন্যই, মেদিনীপুরে সভা অমিত শাহের
বর্তমানে প্রতিদিন নিয়ম করে তৃণমূলের সর্বস্তরের নেতাকর্মীরা দলের বিরুদ্ধে সরব হচ্ছেন; ও বেরিয়ে যাচ্ছেন দল থেকে। রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে; তৃণমূল দলটা কোনো নির্দিষ্ট নীতির উপর নির্ভর করে গড়ে ওঠেনি। মূলত প্রবল সিপিএম বিরোধিতাকে ভিত্তি করেই এই দল গড়ে উঠেছিল। মানুষ তখন পরিবর্তন চাইছিলেন। সেই সময়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভাবমূর্তি মানুষকে স্বপ্ন দেখিয়েছিল। কিন্তু মাত্র ন’বছরেই সেই মমতা ম্যাজিক যেন হারিয়ে গেছে মানুষের মন থেকে।
এত দ্রুত তৃণমূল কংগ্রেসের ভাঙনের কারণ হিসাবে; রাজনৈতিক মহল দায়ী করেছেন; দলের যাবতীয় ক্ষমতা মাত্র তিন-চারজন মানুষের কুক্ষিগত হয়ে যাওয়াকে। মূল সমস্যা এখানেই বলে মনে করা হচ্ছে। তার সঙ্গে যোগ হয়েছে বিভিন্ন প্রকল্পে কাটমানি; কেন্দ্রের প্রকল্পের টাকা না পাওয়া ও আমফানের টাকা দুর্নীতির অভিযোগ। এক মধ্যেই ভোটকে লক্ষ করে বিজেপির আ’ক্রমণ। এখন এটাই দেখার; এত প্রতিকূলতার মধ্যেও কি মমতা পারবেন তাঁর ম্যাজিক বাঁচিয়ে রাখতে? একুশের ভোটের রেজাল্ট এর উত্তর দেবে।