রাম মন্দির না বাবরি মসজিদ, লড়াই পিছিয়ে গেল

964
Image Source: Google

নিউ দিল্লি: রাম মন্দির না বাবরি মসজিদ, অযোধ্যায় বিতর্কিত জমির মালিকানা কার ? আসল লড়াই শুরুর আগেই সুপ্রিম কোর্ট পিছিয়ে দিল শুনানির দিন। সোমবার, দেশের শীর্ষ আদালতের প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈর নেতৃত্বে ৩ বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চে মূল মামলার শুনানি শুরুর আগেই থামিয়ে দেওয়া হয়। মুল মামলা শুরু হতে পারে ২০১৯ সালের জানুয়ারিতে। নতুন ডিভিশন বেঞ্চ নতুন বছরে ঠিক করবে কবে মুল মামলার শুনানি শুরু হবে।

রাম মন্দির না বাবরি মসজিদ ? জানা যায়, মসজিদটি ১৫২৭ খ্রীষ্টাব্দে ভারতের প্রথম মুঘল সম্রাট বাবরের আদেশে নির্মিত হয় এবং তাঁর নাম অনুসারে নামাঙ্কিত হয়। মুঘল সম্রাট বাবর ১৫২৬ খ্রিষ্টাব্দে উত্তর ভারতের কিছু অংশ দখল করেন।

কিন্তু শাসন সংক্রান্ত সংগঠন গড়ে তোলার আগেই বাবর মারা যান। বাবরি মসজিদ বাবর নির্মাণ করেন নি। বাবরি মসজিদ নির্মাণ করেন বাবরের সঙ্গে আসা মীর বাকী নামে একজন সম্ভ্রান্ত ব্যক্তি। বাবরি মসজিদের মধ্যে প্রাপ্ত প্রস্তরফলক থেকে জানা যায়, মীর বাকী মসজিদটি স্খাপন করেন ৯৩৫ হিজরিতে, খ্রিষ্টাব্দের হিসাবে যা দাঁড়ায় ১৫২৭ ১৫২৮।

আরও পড়ুনঃ রাম মন্দির না বাবরি মসজিদ, সুপ্রিম কোর্টে শুরু আসল লড়াই

অন্যদিকে হিন্দুদের বিশ্বাস, অযোধ্যাই ছিল রাজা রামের রাজত্বের রাজধানী। রাম কেবল রাজা ছিলেন না, তিনি ছিলেন বিষ্ণুর অবতার। রামের মৃত্যুর পর অযোধ্যায় স্খাপিত হয় রাম মন্দির। মীর বাকী এই রাম মন্দির ভেঙে সেখানে নির্মাণ করেন বাবরের নামে বাবরি মসজিদ। রামায়ণ ভারতের বিখ্যাত একটি কাব্যগ্রন্থ। এই কাব্যগ্রন্থে বলা হয়েছে, অযোধ্যা রামের জন্মভূমি।

১৯৯২ সালে একটি রাজনৈতিক সমাবেশের উদ্যোক্তারা, ভারতীয় সুপ্রিম কোর্টের আদেশ অনুযায়ী মসজিদ ক্ষতিগ্রস্ত হবে না এই প্রতিশ্রুতি দিয়ে মসজিদ সংলগ্ন এলাকায় একটি রাজনৈতিক সমাবেশ শুরু করে। যা পরে ১,৫০,০০০ জন করসেবক সম্মিলিত একটি- দাঙ্গার রূপ নেয় এবং মসজিদটি সম্পূর্ণরূপে ভূমিসাৎ করা হয়।

আরও পড়ুনঃ সনাতন হিন্দু ধর্মকে ছোট করার চেষ্টা সফল হবে না

যার ফলে, ভারতের প্রধান শহরগুলোতে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা সংঘটিত হয় যা মুম্বাই ও দিল্লী শহরে প্রায় ২০০০ মানুষের প্রাণ কেড়ে নেয়। ভারতের অনেক রাজ্যে ধর্মীয় লড়াই শুরু হয়ে যায়।

২০১০ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর এলাহাবাদ হাইকোর্ট বাবরি মসজিদ যে স্থানে ছিল সেই ভূমি সম্পর্কিত রায় দেয়।এলাহবাদ হাইকোর্টের তিন জন বিচারপতির সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ তাদের রায়ে ২.৭৭ বা ১.১২ হেক্টর ভূমি সমান তিনভাগে ভাগ করার রায় প্রদান করেন।

Image Source: Google

সেই রায় অনুযায়ী, তিন ভাগের এক অংশ পাবে হিন্দু মহাসভা। রাম জন্মভূমিতে রাম মন্দির নির্মাণের জন্য। দ্বিতীয় অংশ পাবে ইসলামিক সুন্নি ওয়াকফ বোর্ড, মসজিদ নির্মাণের জন্য এবং বাকি তৃতীয় অংশ পাবে নির্মোহী আখরা নামে একটি হিন্দু সংগঠন।

এই স্থানে রামমন্দির ধ্বংস বাবরি মসজিদ নির্মিত হয়েছিল এ বিষয়ে তিনজন বিচারকের দুজন একমত হয়েছিলেন। তবে তিনজন বিচারকই এই বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছান যে, পূর্বে বাবরি মসজিদের জায়গায় একটি সুপ্রাচীন হিন্দু মন্দির বিদ্যমান ছিল।

আদালতের তিন জন বিচারপতি, বিচারপতি এস আর আলম, বিচারপতি ভানওয়ার সিং এবং বিচারপতি খেমকারণের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চের আদেশে আরকিওলজিক্যাল সার্ভে অফ ইণ্ডিয়া ওই স্থান খনন করে একটি সুবৃহৎ হিন্দু ধর্মীয় স্থাপত্য বা মন্দিরের সন্ধান পায়।

Image Source: Google

এলাহাবাদ হাইকোর্টের এই রায়ের বিরুদ্ধেই সুপ্রিম কোর্টে যায় সব পক্ষই। সোমবার, দেশের শীর্ষ আদালতে এই মামলার মূল শুনানি শুরু হবার আগেই থামিয়ে দেওয়া হল। প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈ ছাড়া এই মামলার ডিভিশন বেঞ্চে ছিলেন বিচারপতি সঞ্জয় কিষেন কওল ও বিচারপতি কে এম জোসেফ।

মামলার গুরুত্ব বিচার করে প্রতিদিনই এই মামলার শুনানি হবে, এমনটাই মনে করা হয়েছিল। আগামী লোকসভা ভোটের আগে, দেশের রাজনীতিতে সবচেয়ে আলোচিত এই মামলা নিয়ে কংগ্রেস ও বিজেপির মধ্যে বিতর্ক চরমে উঠেছে।

আরও পড়ুনঃ সিবিআই এর নিজেদের ঝামেলা বাংলায় স্বস্তিতে রাখবে তৃণমূলকে

তবে ইতিমধ্যেই গত ২৭ শে সেপ্টেম্বর তাদের এক রায়ে সুপ্রিম কোর্টের তৎকালীন প্রধান বিচারপতি দীপক মিশ্র ও বিচারপতি অশোক ভূষণ জানিয়েছিলেন, ‘এই আদালত বিবেচনা করে দেখেছে যে হিন্দুদের কাছে অযোধ্যার একটি বাড়তি গুরুত্ব আছে, যেখানে ভগবান রামের জন্মস্থান ছিল বলে সুপ্রাচীন প্রবাদ রয়েছে’।

আর এখানেই মামলা জেতার ব্যপারে আশাবাদী হিন্দু মহাসভা। তবে মসজিদ গড়ার ব্যপারেই রায় দেবে সুপ্রিম কোর্ট, বিশ্বাস মুসলিম ওয়াকফ বোর্ডের। তবে আদালত বিশেষজ্ঞরা মনে করছিলেন, ২০১০ এর এলাহাবাদ হাইকোর্টের রায়কেই বহাল রাখতে পারে দেশের সর্ব্বোচ্চ আদালত। শুনানি পিছিয়ে যাওয়ায় আপাতত এই নিয়ে জটিলতা কিছুদিনের জন্য মুলতবি রইলো।

সোমবার সকাল থেকেই গোটা দেশের নজর ছিল দেশের শীর্ষ আদালতের দিকে। কি রায় দেবে দেশের সর্ব্বোচ্চ আদালত ? রাম মন্দির না বাবরি মসজিদ ? নাকি ধর্মনিরপেক্ষ ভারতে পাশাপাশি সহাবস্থান মন্দির আর মসজিদের ? তবে সেই লড়াই আদালতের নির্দেশে এখন পিছিয়ে গেল। নতুন বছরে শীর্ষ আদালতের নতুন ডিভিশন বেঞ্চের নতুন বিচারপতিরা এই মামলা শুনবেন। ততদিন মুলতবি রইল মন্দির বনাম মসজিদের লড়াই।

Comments

comments

আপনাদের মতামত জানাতে কমেন্ট করুন