বাংলার বাঘের ছেলে, শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের পশ্চিমবঙ্গ তৈরির ভূমিকার কথা জানুন ও জানান

1144
বাংলার বাঘের ছেলে, শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের পশ্চিমবঙ্গ তৈরির ভূমিকার কথা জানুন ও জানান
বাংলার বাঘের ছেলে, শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের পশ্চিমবঙ্গ তৈরির ভূমিকার কথা জানুন ও জানান

বাংলার বাঘের ছেলে, শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের; পশ্চিমবঙ্গ তৈরির ভূমিকার কথা জানুন। ২৩শে জুন, শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের মহাপ্রয়াণের দিন। অসংখ্য অজানা সত্য ঘটনা রয়েছে; পশ্চিমবঙ্গের ‘ত্রাতা’ শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়কে নিয়ে। জেনে নিন, পশ্চিমবঙ্গ তৈরির কথা ও বর্তমান পশ্চিমবঙ্গের জন্মদাতার ভুমিকার কথা। আপনারা সেই সত্য ইতিহাস জানুন ও জানান।

শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জির বাবা ‘বাংলার বাঘ’; যিনি কলকাতা হাইকোর্টের প্রাক্তন বিচারপতি এবং কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্যও বটে; স্যার আশুতোষ মুখোপাধ্যায়। তাঁর সুযোগ্য পুত্র শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়। স্বাধীনতার আগেই পূর্ব বঙ্গপ্রদেশের অর্থমন্ত্রী; স্বাধীনতার পর নেহেরু সরকারের শিল্প ও বাণিজ্য দফতরের মন্ত্রী। একসময় সামলেছেন; কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের পদও। পরবর্তীতে তৈরি করেন রাজনৈতিক দল ভারতীয় জনসঙ্ঘ। যা আজ ভারতীয় জনতা পার্টিতে রূপান্তরিত হয়ে; বর্তমানে ভারতের শাসক দল। এহেন বর্ণময় যার জীবন; তাঁর পশ্চিমবঙ্গের রূপায়ণে ভূমিকার কথা আমরা বাংলার কটা মানুষ মনে রেখেছি?

একটু শুরু থেকে শুরু করা যাক। ১৯৩৫ এর ভারত শাসন আইন অনুযায়ী; বাংলাকে স্বতন্ত্র প্রদেশের মর্যাদা দেওয়া হয়। স্বাধীনতা পূর্বে মু’সলিম লীগ সবসময় চেয়ে এসেছিল; বাংলা যাতে ভাগ না হয়। এবং বাংলার পুরোভাগই যাতে; ধ’র্মের ভিত্তিতে গঠিত হওয়া দেশ পা’কিস্তানের অন্তর্গত হয়। তার সমস্ত প্রচেষ্টা চালিয়ে গিয়েছিল মুসলিম লীগ। কারণ স্বাধীনতার প্রাক মুহূর্তে; পূর্ববঙ্গ পশ্চিমবঙ্গের আলাদা বিভাজন ছিল না।

স্বতন্ত্র প্রদেশ হবার দরুন এবং সামগ্রিকভাবে অখন্ড বাংলায় মু’সলিম অ’ধ্যুষিত হবার কারনে; সমগ্র বাংলার পা’কিস্তানে অন্তর্ভুক্তির দাবি জানায় মু’সলিম লীগ। কিন্তু অখন্ড বাংলার পশ্চিমাংশ ছিল হি’ন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠ। মু’সলিম লীগের দাবির মুখে বাংলার পশ্চিমাংশের জনগনের ত্রাতার ভূমিকায়; অবতীর্ণ হলেন শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়। বাংলার পশ্চিমাংশের এই সংকটের সময়ই; পশ্চিমবাংলার রক্ষাকারী হিসেবে আবির্ভাব হল তাঁর।

প্রথমে ভারত ভাগের প্রবল বিরোধী হওয়া সত্ত্বেও; পরে শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জি বুঝতে পারেন, মু’সলিম লীগের দেশভাগের মরিয়া নীতি এবং ধ’র্মের উ’স্কানির সামনে ভারত ভাগ এক অনিবার্য পরিণতি হতে চলেছে। তখনই তিনি ঠিক একই দাবি নিয়ে; বাংলা ভাগের দাবি তুলে পশ্চিমভাগকে ছি’নিয়ে নিতে বদ্ধপরিকর হন। ১৯০৫ সালে প্রথম বাংলা ভাগের সময়; ব্রিটিশরা প্রশাসনিক কারণ দেখিয়েছিল পরবর্তীতে মূলত পশ্চিমভাগের চাপে ১৯১১ তে বঙ্গভঙ্গ রদ করা হয়। কিন্তু দ্বিজাতি তত্বের ওপর ভিত্তি করে; ভারত ভাগের সময় বাংলার বিভাজনও অবশ্যম্ভাবী হয়ে পড়েছিল।

আরও পড়ুন; কলকাতা জানতেই পারেনি, তার ‘পাগল প্রেমিক’ ছেড়ে চলে গেল চিরবিদায়ে

সেই সময় বঙ্গ প্রদেশের মু’সলিম লীগ নেতা; হোসেন সুরাবর্দী স্বাধীন বাংলার দাবি তুললেন। যা ভারত কিংবা পা’কিস্তান কারোর সাথেই যাবেনা। সুরাবর্দী জানতেন যে বাংলা ভাগ হলে; অর্থনৈতিক ভাবে পূর্ব ভাগের ক্ষতি। কারণ কয়লা খনি, পাটকল, শিল্প প্রভৃতির বেশির ভাগটাই পশ্চিমভাগে পড়ছে। তারপর তৎকালীন ভারতের সবচেয়ে বড় শহর, বন্দর ও বাণিজ্য নগরী কলকাতাও হাতছাড়া হতে চলেছে। কিন্তু মুশকিল হলো, তার এই নীতি তার দলের নীতির বিরদ্ধে যাচ্ছিল।

প্রথম দিকে বর্ধমানের মু’সলিম লীগ নেতা আবুল কাশিম; তাকে সমর্থন করে। কিন্তু অন্য দুই নেতা নুরুল আমিন ও আক্রম খান এর বিরোধিতায় সরব হলো। অবাক করে মহম্মদ আলি জিন্নাহ ব্যপারটির গুরুত্ব বুঝে; তাকে নীরবে সমর্থন দিলেন। শুরু হল লড়াই। কংগ্রেস নেতৃত্ব তৎক্ষনাৎ এই দাবি প্রত্যাখ্যান করল। গুটিকয়েক নেতা এর সমর্থন করলেন; যার মধ্যে ছিলেন নেতাজির দাদা শরৎ বোস ও কিরণ শংকর রায়। পন্ডিত নেহেরু এনং সর্দার প্যাটেল; এরকম দাবি উড়িয়ে দিলেন।

প্রবল বিরোধিতা শুরু করলেন শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়। তিনি বোঝালেন এটা মু’সলিম লিগের চাল। মর্যাদাপূর্ণ কলকাতা হাতছাড়া হওয়া ও পশ্চিমভাগের দখল হারানোর ভয়ে; মু’সলিম লীগ তথা জিন্না সুরাবর্দীকে ঢাল করে এই চাল চেলেছেন। স্বাধীন বঙ্গ আসলে পা’কিস্তানের প্রভাবেই চলবে। তাদের দ্বারাই নিয়ন্ত্রিত হবে। তিনি আরও বললেন, তিনি আলাদা পশ্চিমবঙ্গ চান; যা জিন্নার তথা পা’কিস্তানের প্রভাব থেকে সর্বৈব মুক্ত হবে।

পা’কিস্তানের হাত থেকে বাংলার পশ্চিম অংশকে রক্ষা করতে; তিনি মরিয়া হয়ে উঠলেন। এই দাবির ভিত্তিতে বাংলার বিধানসভায়; ৩টি পৃথক ভোট সংগঠিত হয়েছিল। কি কি সেশন; কারা ভোট দিয়েছিল; কি কি সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়; সেই তিনটি ভোট থেকে? দেখুন একনজরে।

১) জয়েন্ট সেশন; এখানে সমস্ত সদস্যদের ভোটে ১২৬-৯০ ব্যবধানে ভারতীয় কন্সটিটুয়েন্ট এসেম্বলিতে যোগদানের বিপক্ষে রায় দেওয়া হল।
২) মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ এলাকার সদস্যদের সেশন; এখানে ১০৬-৩৫ ভোটে বাংলা ভাগের বিপক্ষে রায় দেওয়া হল। এবং পরিবর্তে পাকিস্তানের কনস্টিটুয়েন্ট এসেম্বলিতে যোগদানের পক্ষে মত দেওয়া হল।
৩) অমুসলিম এলাকার সদস্যদের সেশন; এখানে ৫৮-২১ ভোটে বাংলা ভাগের পক্ষে রায় গেল। মাউন্টব্যাটেন প্ল্যান অনুযায়ী; বাংলা ভাগের পক্ষে যেকোন সেশনের একটির সিঙ্গেল মেজরিটি ভোটের ফলস্বরূপ; বাংলা ভাগের পক্ষে সায় দেওয়া হল।

বাউন্ডারি কমিশনের প্রধান স্যার রাডক্লিফের তত্বাবধানে; শুরু হল বঙ্গ বিভাজনের তোড়জোড়। ঠিক হল, ১৪ ও ১৫ ই আগস্ট যথাক্রমে পা’কিস্তান ও ভারতকে স্বাধীনতা হস্তান্তর করা হবে; ১৯৪৭ এর ভারত স্বাধীন আইন অনুসারে।

জিন্নার ডাইরেক্ট একশন ডে, দা’ঙ্গা’র রাজনীতি এবং ধ’র্মীয় বি’ভাজনকা’মী এ’জেন্ডা দেখে; শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের আগেই আঁচ করতে পেরেছিলেন; বাংলার সংখ্যাল’ঘু অমু’সলিমরা ধ’র্মীয় কারণে বিভক্ত পা’কিস্তানে সুরক্ষিত নয়। তাই পশ্চিমবঙ্গের দাবি থেকে তিনি সরেন নি। আত্মবিশ্বাসে বলীয়ান হয়ে; তিনি নিজেকে তুলে ধরতে পেরেছিলেন; পশ্চিমবঙ্গের প্রাণপুরুষ হিসেবে।

সম্পাদকীয় লিখলেনঃ অভিরূপ চক্রবর্তী (লেখা ও তথ্য সম্পূর্ণ লেখকের)

Comments

comments

আপনাদের মতামত জানাতে কমেন্ট করুন