পৃথিবী এগোলেও তান্ত্রিকের কালো জাদু টোনায় ডুবে আফ্রিকা

1887
Image Source: Google Image

শান্তনু সরস্বতী, কলকাতা: বিশ্বের সেরা জাতীয় ফুটবল দলগুলির সঙ্গে ঠিক যেমন একদল চিকিৎসক থাকেন, আফ্রিকার দেশগুলির প্রতিটি ফুটবল দলের সঙ্গে ঠিক তেমনই থাকেন উইচ্ ডক্টর বা তান্ত্রিক। পুরো আফ্রিকান ফুটবলটাকেই গত পঞ্চাশ বছর ধরে শাসন করে চলেছে এই উইচ্ ডক্টররা। এ এক অদ্ভুত দুনিয়া, অবাক করা গল্প। যেখানে ফুটবলের সঙ্গে যুক্ত দেশের মানুষ এই একবিংশ শতাব্দীতে দাঁড়িয়েও, বিশ্বাস করেন যাদুমন্ত্রে। পড়ুন তিন খণ্ডের ‘অবিশ্বাস্য সত্যের’ প্রথম পর্ব।

Image Source: Google Image

আফ্রিকার আইভরি কোস্ট থেকে শুরু করে, বেনিন, কেনিয়া, নাইজেরিয়া, কঙ্গোই বলুন, আরজাম্বিয়া, উগান্ডা, দক্ষিণ আফ্রিকা, এমন কি রজার মিল্লার দেশ ক্যামেরুনই বলুন, প্রায় নব্বই শতাংশ ফুটবল খেলিয়ে দেশ ভর করে চলেছে ডাইনি-বিদ্যা বা উইচক্রাফ্টের ওপরে।

এত ভালো ফুটবল খেলা সত্ত্বেও আফ্রিকান ফুটবলারদের ব্ল্যাক ম্যাজিকের শরণাপন্ন হতে হবে কেন? নাইজেরিয়ার একজন স্থানীয় কোচ মাউরো বাফাংগার মতে ব্যাপারটা প্রতিযোগিতা আর হিংসা থেকেই আসে। আফ্রিকার অনেক জায়গায় খেলাটাকে রীতিমত যুদ্ধ হিসাবে বিবেচনা করা হয়।

Image Source: Google Image

ম্যাচ জেতার জন্য ফুটবলাররা যেকোনও কিছুই করতে পারে। তান্ত্রিকদের কাছে যাওয়ার কারণ এটাই। নিজের পারফরম্যান্সের উন্নতি, বিপক্ষদলের খেলোয়াড়দের ঠিকভাবে খেলতে না দেওয়া কিংবা ইনজুরিতে ফেলা। কখনও কখনও কোন প্লেয়ারের সাথে শত্রুতা থাকলে তার ভয়ংকর ক্ষতি করার চেষ্টা, এমনকি মেরে ফেলারও চেষ্টাও খুব স্বাভাবিক এদের কাছে।

বিপক্ষ দলের সেরা প্লেয়ার বা প্রমিজিং প্লেয়াররাই বেশিরভাগ ক্ষেত্রে যেটার শিকার হয়। খেলোয়াড়দের জাদু থেকে সুরক্ষা,আর বিপক্ষ দলের উপর এর প্রয়োগ করার জন্যই তান্ত্রিকদের মোটা অংকের বেতন দিয়ে রাখা হয় আফ্রিকার স্থানীয় দলগুলোতে। দলের ফুটবলারদের চাইতেও বড় ভরসা এই তান্ত্রিকরা।

Image Source: Google Image

তান্ত্রিকদের প্রভাবটা ঠিক কেমন? নিউ ইয়র্ক টাইমসের এক সাংবাদিককে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে, নাইজেরিয়ার এক গোলরক্ষক জানায়, ” ব্যাপারটা ভয়ংকর” বিপক্ষ দলের খেলোয়াড় প্রায় ৩০ মিটার দূর থেকে দূর্বল শট নেয়। সেটা আটকানো আমার জন্য কোনও ব্যাপার ছিলো না। কিন্তু শট নেয়ার পরপরই আমি দেখি বল নয়, বরং অনেকগুলো সূচালো বর্শা আমার দিকে ছুটে আসছে। জীবন বাঁচানোর জন্য আমি মাঠ ছেড়ে পালিয়ে যাই ও জ্ঞান হারাই”।

নাইজেরিয়ার জাতীয় লিগে খেলা এক স্ট্রাইকারও অভিযোগ করে কিছু কিছু ম্যাচে গোলের সুযোগ আসলেই তার পা অবশ হয়ে যাচ্ছিলো। কোনও মতেই সে পা নাড়াতে পারছিলো না।

ব্ল্যাক ম্যাজিক অ্যান্ড ফুটবল প্রবন্ধে সাংবাদিক ডেনিস ম্যাচিও লেখেন,২০১৫ সালের আগস্ট মাসে ডায়নামো অবদৌলা ক্লাবের ২৬ বছর বয়সী স্ট্রাইকার লিপোল্ড এ্যাংগং ওবেন খেলার মাঠেই মারা যায়। এর ঠিক কয়েকদিন পরেই ওই একই দলের গোলরক্ষক ফার্দিনান্দ বোগ মারা যায় হঠাৎই ।

পোস্টমর্টেমে মৃত্যুর কারণ হিসাবে, “অজানা অসুখ” লেখা হলেও ফুটবলপ্রেমী নাইজেরিয়ানদের বদ্ধমূল ধারণা, লিপোল্ড এবং ফার্দিনান্দের মৃত্যুর কারণ প্রতিপক্ষ দলের উইচ্ ডক্টর বা ডাক্তার তান্ত্রিক।

১৯৮০ সালে আফ্রিকান নেশনস্ কাপে সিয়েরা লিওনের মুখোমুখি হয় গাম্বিয়া। গাম্বিয়ার কোচ ছিলেন ইউরোপ থেকে আগত হোলগার ওবারম্যান। মাঠে প্রবেশ করার সময়ই ঘটে আজব এক ঘটনা। স্টেডিয়ামের মূল প্রবেশদ্বারের মুখে সবুজ রঙের কিছু পাউডার দিয়ে আজব কিছু নকশা আঁকা ছিলো।

Image Source: Google Image

নকশাগুলো দেখে প্লেয়াররা ভয়ে কাঁপতে থাকে এবং মাঠে ঢুকতে অস্বীকার করে। কোচকে জানায়, পথটা কালো জাদু করা, আর এর মধ্যে যে পা ফেলবে তার ভয়ংকর ক্ষতি হবে।খেলোয়াড়েরা বিদ্রোহ করে, এবং ফিরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়।

জাদুতে বিশ্বাস না করা ওবারম্যান তখন সব প্লেয়ারকে বাসে উঠিয়ে ড্রাইভিং সিটে নিজে বসে পুরো বাসটাই প্রবেশপথ দিয়ে সজোরে চালিয়ে নেন। শেষপর্যন্ত খেলা শুরুর মাত্র দুই মিনিট আগে গাম্বিয়া দল মাঠে প্রবেশ করে।

চলবে ‘অবিশ্বাস্য সত্য’ দ্বিতীয় পর্বেও। পড়তে থাকুন ‘The News বাংলা’ ফেসবুক পেজ।
দ্বিতীয় পর্ব পড়ুনঃ পৃথিবী এগোলেও তান্ত্রিকের কালো জাদু টোনায় ডুবে আফ্রিকা

Comments

comments

আপনাদের মতামত জানাতে কমেন্ট করুন