নিষিদ্ধ ‘মাসিক কুঁড়েঘরে’ এবার তরুণীর অস্বাভাবিক মৃত্যু

466
নিষিদ্ধ 'মাসিক কুঁড়েঘরে’ এবার তরুণীর মৃত্যু
নিষিদ্ধ 'মাসিক কুঁড়েঘরে’ এবার তরুণীর মৃত্যু/The News বাংলা

নিষিদ্ধ ‘মাসিক কুঁড়েঘরে’ এবার তরুণীর মৃত্যু। নেপালে ঋতুমতী নারীদের জন্য তৈরি জানালাবিহীন ‘মাসিক কুঁড়েঘরে’ দমবন্ধ হয়ে মারা গেছেন ২১ বছরের এক তরুণী। তাঁর নাম পার্বতী বোগাতি। নেপালের দোতি জেলায় এ ঘটনা ঘটে। নেপালে নিষিদ্ধ হয়ে গেছে এই ধরণের ‘মাসিক কুঁড়েঘর’। কিন্তু তাও সেই প্রথা যে চলছে এই ঘটনা তার প্রমাণ।

পার্বতীর শাশুড়ি লক্ষ্মী বোগাতি বউকে দেখতে গিয়ে তাঁর লাশ পান। লক্ষ্মী কাঠমান্ডু পোস্টকে বলেন, ‘এক দিন পরই তাঁর ঋতুস্রাব শেষ হবে, এ নিয়ে সে খুব খুশি ছিল। কিন্তু অভাগী চিরতরেই চোখ বুজল।’ দেশটির বাজুরা জেলায় কয়েক সপ্তাহ আগে এমন কুঁড়েঘরে থাকার সময়ে এক নারী দুই ছেলেকে নিয়ে পুড়ে মারা যান।

পার্বতীর মৃত্যু সম্পর্কে স্থানীয় পুলিশ কর্মকর্তা লাল বাহাদুর ধামি এএফপিকে বলেন, ‘আমাদের সন্দেহ হচ্ছে, রাতের বেলা ঠান্ডা থেকে বাঁচতে সে ঘরের ভেতরে দরজা বন্ধ করে আগুন ধরায়। ঘরটিতে কোনো জানালাও নেই। এর ফলে ধোঁয়া বাইরে যেতে পারছিল না। এতে শ্বাস বন্ধ হয়ে তাঁর মৃত্যু হয়েছে’।

নেপালে প্রাচীন ‘চৌপাদি’ প্রথা অনুযায়ী মাসিকের সময় বা সন্তান জন্মদানের পরপর নারীদের ‘অশুদ্ধ’ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এই সময় নারীরা দুর্ভাগ্য বয়ে আনতে পারেন বলে মনে করা হয়। তাই মাসিকের সময় নারীদের কুঁড়েঘরে বা গোয়ালঘরে থাকতে বাধ্য করা হয়।

ঋতুস্রাবের সময় মেয়েদের কিছু কিছু খাবারও খেতে দেওয়া হয় না। অনেক কিছু স্পর্শ করতে দেওয়া হয় না। তখন অন্যরা দূর থেকে তাদের পাতে ঢেলে দেয়। ওই সময়ে নারীদের, পুরুষ ও গরু-ছাগল স্পর্শ করাও নিষিদ্ধ। কিছু খাবার ও দেবতার মূর্তি স্পর্শ করতে দেওয়া হয় না।

বাড়ির শৌচাগার ব্যবহার ও কোনো কিছু ধোয়ার সুবিধা দেওয়া হয় না। গ্রামে দূরত্ব রেখে হাঁটাচলা করতে বলা হয়। কিশোরীরা স্কুলে যেতে পারে না। প্রচণ্ড শীতেও মেয়েদের বাড়ির বাইরে রাখা হয়। অনেক সময় ওই মেয়েদের ওপর সন্ত্রাসী হামলার ঘটনাও ঘটে।

মাসিকের সময় বা প্রসূতির সময় মাকে বাড়ির বাইরে পাঠানোর ওপর ২০০৫ সালে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে নেপাল সরকার। ২০১৭ সালে এটিকে অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হয়। কিন্তু প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে এখনো এই কুসংস্কার চালু রয়েছে।

নেপালের আইন অনুসারে, কোনো নারীকে চৌপাদিতে বাধ্য করা হলে তিন মাসের কারাদণ্ড ও ৩০ ডলার অর্থদণ্ডের বিধান রয়েছে। অধিকারকর্মীরা আইনটির কঠোর প্রয়োগের দাবি জানিয়েছেন। কিন্তু কাজের কাজ যে কিছুই হয়নি সেটা এই ঘটনাতেই প্রমাণ।

Comments

comments

আপনাদের মতামত জানাতে কমেন্ট করুন