আয়কর দফতরের নোটিশ, মাথায় হাত কলকাতার পুজো উদ্যোক্তাদের

885
আয়কর দফতরের নোটিশ, মাথায় হাত কলকাতার পুজো উদ্যোক্তাদের/The News বাংলা
আয়কর দফতরের নোটিশ, মাথায় হাত কলকাতার পুজো উদ্যোক্তাদের/The News বাংলা

The News বাংলা, কলকাতা: বেশ চিন্তায় পরেছেন কলকাতার পুজো উদ্যোক্তারা। ডিসেম্বরের শেষে কলকাতার প্রায় ৪০টি বড় পুজোর কর্তারা পেয়েছেন আয়কর দফতরের নোটিশ। কেন কোটি কোটি টাকা আয় ও খরচা করার পরেও এক টাকাও আয়কর দেন না, টিডিএস জমা করেন না পুজো আয়োজকরা, প্রশ্ন আয়কর দফতরের। আগামী ৭ ও ৮ জানুয়ারী সোম ও মঙ্গলবার, ২০১৮ সালের পুজোর সব হিসাব নিয়ে আয়কর দফতরে দেখা করার নির্দেশ পেল কলকাতার ৪০টি পুজো।

রাজ্যের দুর্গাপুজোয় খরচ হয় কয়েক হাজার কোটি টাকা। কলকাতায় এক একটি বড় পুজো কোটি টাকার বেশি খরচা করে। অথচ এক টাকাও আয়কর দেওয়া হয় না। কেন আয়কর দেন না ? কেন টিডিএস কাটেন না? এই সব প্রশ্ন নিয়েই কলকাতার বড় ৪০টি পুজোকে এবার নোটিশ দিল ইনকাম ট্যাক্স। চিঠিতে পুজোর খরচা সংক্রান্ত বেশ কিছু প্রশ্নের জবাব চেয়ে অফিসে এসে দেখা করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে উদ্যোক্তাদের।

আয়কর দফতরের নোটিশ, মাথায় হাত কলকাতার পুজো উদ্যোক্তাদের/The News বাংলা
আয়কর দফতরের নোটিশ, মাথায় হাত কলকাতার পুজো উদ্যোক্তাদের/The News বাংলা

জানা গেছে, কলকাতার প্রায় ৪০টি বড় পুজো কমিটিকে নোটিশ ধরিয়েছে আয়কর দফতর। জানুয়ারী মাসের ৭ ও ৮ তারিখের মধ্যে ওই সব পুজো কমিটিগুলির কর্তাদের গত বছরের পুজোর জমা খরচের পুরো হিসেব নিয়ে আয়কর ভবনে দেখা করতে বলা হয়েছে। বেশ কিছু প্রশ্নের ক্লারিফিকেশন চেয়েছে আয়কর দফতর। ডিসেম্বরের শেষেই পুজো উদ্যোক্তারা পেয়েছেন ইনকাম দফতরের নোটিশ। কি কি প্ৰশ্ন এর জবাব চেয়েছে ইনকাম ট্যাক্স দফতর?

মূল প্ৰশ্ন হল, মণ্ডপ শিল্পী বা থিম শিল্পী, প্রতিমা শিল্পী, আলোক শিল্পী, বাজনদার সকলকেই টাকা দেয় পুজো কমিটিগুলি। অথচ প্রদান করা সেই টাকা থেকে টিডিএস বা ট্যাক্স ডিডাকটেড অ্যাট সোর্স কেটে তা আয়কর দফতরের কাছে জমা করে না কোন পুজো উদ্যোক্তাই। কোটি কোটি টাকা আয় ও খরচা হলেও, সোর্স অফ ইনকাম ও খরচা এসবের অডিট করায় না কেউই। কোনো হিসাব আয়কর দফতরে কেন জমা পরে না, কেন পেমেন্ট করা সত্ত্বেও টিডিএস কাটা হয় না, এই সব প্রশ্নের ক্লারিফিকেশন চেয়েছে ইনকাম ট্যাক্স।

আরও পড়ুনঃ

ভোরবেলায় শবরীমালা মন্দিরে ঢুকে ইতিহাস সৃষ্টি ‘মা দুর্গার’

ফের গরু চোর সন্দেহে খুন, এবার ‘গোরক্ষকের’ নাম মুসলিম মিঁয়া

কংগ্রেস ছেড়ে মমতার ‘মহানায়িকা’ এবার মোদীর বক্স অফিসে

দেশপ্রেম বাড়াতে স্কুলের রোল কলে এবার ‘জয় হিন্দ’ ও ‘জয় ভারত’

আয়কর দফতর সূত্রে জানা গেছে, ২০১৮ সালে রাজ্যে দুর্গাপুজোয় প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকা খরচা হয়েছে। অথচ দু-একটি পুজো উদ্যোক্তা ছাড়া কেউই টিডিএস কেটে ইনকাম ট্যাক্সে জমা দিচ্ছেন না। অথচ ১৯৬১ সালের ইনকাম ট্যাক্স রুলস অনুযায়ী, কাউকে তাঁর কাজের বিনিময়ে কোনও টাকা দেওয়া হলে টিডিএস কাটতে হবে এবং তা আয়কর দফতরে জমা করতে হবে।

আয়কর দফতরের কর্তারা জানাচ্ছেন, শিল্পীদের লাখ লাখ টাকা দেওয়া হয় যার টিডিএস আয়করের পাওয়ার কথা কিন্তু একটা টাকাও জমা পরে না। আয়কর কর্তাদের মতে, এখন দুর্গাপূজায় সম্পূর্ণ পেশাদারদের দিয়েই কাজ করানো হয়। সে ক্ষেত্রে খরচের ১০ শতাংশ আয়কর দফতরে জমা পড়ার কথা। কিন্তু কিছুই জমা পরে না।

ইনকাম ট্যাক্স কর্তারা আরও জানাচ্ছেন, রাজ্যে দুর্গাপূজায় প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকা খরচা হয়। কাজ করানো হয় পেশাদের দিয়ে। ১০ শতাংশ টিডিএস বাবদ আয়করে জমা পড়ার কথা প্রায় ৫০০ কোটি টাকা। এই বিশাল টাকা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে আয়কর দফতর। তবে এই ৫ হাজার কোটি টাকার গল্প উড়িয়ে দিয়েছেন পুজো উদ্যোক্তারা।

আর এই বিশাল হিসাব দেখেই এবার কোমর বেঁধেছেন আয়কর দফতরের কর্তারা। প্রাথমিক পর্বে নোটিশ পাঠানো হয়েছে কলকাতার প্রায় ৪০টি পুজো উদ্যোক্তাদের। এক আয়কর কর্তা জানিয়েছেন, উত্তর ও দক্ষিণ কলকাতার ৪-৫টি পুজো কমিটি ছাড়া টিডিএস কাটা ও তা আয়কর দফতরে জমা করার কথা কেউ ভাবেই না কেউ।

ইনকাম ট্যাক্সের নোটিশ পেয়ে চিন্তার ছায়া পুজো উদ্যোক্তাদের মাথায়। শিল্পীদের পেমেন্ট থেকে ১০ শতাংশ টাকা কাটা যাবে কি? না হলে শিল্পীদের পেমেন্ট দেবার পর আবার টিডিএস দেওয়াটা আরও খরচ সাপেক্ষ ব্যপার। সেটাও বহন করতে হবে পুজো আয়োজকদেরই।

পেশায় আইনজীবি, কাশী বোস লেন পুজো কমিটির অন্যতম প্রধান উদ্যোক্তা সৌমেন দত্ত জানিয়েছেন, “আমরা নোটিশ পেয়েছি। হিসাব নিয়ে যাব। তবে শুধু শিল্পীদের ক্ষেত্রে টিডিএস কাটা সম্ভব। বাকি তো গ্রাম থেকে গরিব কারিগরেরা এসে কাজ করেন। তাঁদের বেশির ভাগেরই প্যান কার্ড নেই। অনেকের ব্যাংক একাউন্টও নেই। তা ছাড়া এত হিসেব কে রাখবে? পুজো করব, না এ সব করব?”

হাতিবাগান সর্বজনীন এর পুজো উদ্যোক্তা শাশ্বত বাসু বলছেন “আয়কর দেওয়া উচিত, আমরা ট্যাক্স ফাইল করি। কিন্তু টিডিএস আমরা কি করে কাটব?” তিনি আরও জানান তাঁরা টিডিএস কাটলে শিল্পীদের ও বাজনদারদেরও পুজো সংক্রান্ত বিষয়ে ট্যাক্স ফাইল করতে হবে। সেটা কি সম্ভব?

বেশির ভাগ পুজো উদ্যোক্তারা বলছেন, “থিম শিল্পী থেকে বাজনদার বা ডেকরেটর থেকে আলোক শিল্পী, কেউ তো আর টাকা কম নেবেন না। ফলে, টিডিএস-এর টাকা আমাদের উপরেই বর্তাবে। বিষয়টি নিয়ে আইনজীবীদের পরামর্শ নেওয়া হচ্ছে”। অনেকেই বলেছেন, “পুজো আয়োজন সমাজসেবার মধ্যে পরে, সেখানে ছাড় পাওয়া উচিত”।

কেউ কেউ আবার এর পিছনে ভোটের বছরে রাজনীতির অঙ্কও দেখছেন। কারণ, কলকাতার প্রধান পুজোগুলির বেশির ভাগেরই উদ্যোক্তা হয় রাজ্যের মন্ত্রী, নয়তো তৃণমূলের প্রথম সারির নেতা। অনেকের আবার সভাপতি তৃণমূল নেতা মন্ত্রী। তাঁদের চাপে রাখতেও আয়কর দফতর এমন পদক্ষেপ করে থাকতে পারে বলে মনে করছেন অনেকে।

শুধু বাংলার দুর্গা পুজোয় কেন নজর দিল আয়কর দফতর, সেই প্রশ্নও তুলছেন পুজো উদ্যোক্তা ও কলকাতা পুরসভার মেয়র পারিষদ দেবাশিস কুমার। তাঁর মতে, “মুম্বইয়ের গণেশপুজোয় তো এর থেকে অনেক বেশি জাঁকজমক হয়। সেখান থেকে কি কর চাওয়া হচ্ছে”? দেবাশিস কুমার জানিয়েছেন, তাঁরা টিডিএস কেটে জমা দেন, এই নিয়ে কোন সমস্যা নেই। কিন্তু পুজোর সঙ্গে বেশিরভাগ তৃণমূল নেতা কর্মীরা যুক্ত আছেন, তাই এই রাজনৈতিক চক্রান্ত কেন্দ্রীয় সরকারের।

ঠিক একই কথা বলেছেন রাজ্যের মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস, ববি হাকিম থেকে শুরু করে পুজো উদ্যোক্তা ও উত্তর কলকাতার অনেক পুজোর সঙ্গে জড়িত থাকা অতীন ঘোষও। “পুজোর সঙ্গে তৃণমূল নেতারা সবাই জড়িত, তাই দেশের সব পুজোকে ছেড়ে বাংলার দুর্গা পুজোকে টার্গেট কেন্দ্রীয় সরকারের”, অভিযোগ সবার।

উত্তর কলকাতার এক পুজো উদ্যোক্তা আবার বলেছেন, “দিদির দেওয়া ১০ হাজার টাকা অনুদান কেটে নেবার চক্রান্ত করেছে মোদী। তাই এই পদক্ষেপ”। সব মিলিয়ে ২০১৯ এর পুজো প্রস্তুতির শুরুতেই পুজো উদ্যোক্তাদের মাথায় চিন্তার পাহাড় চাপাল আয়কর দফতর। আগামী সোম ও মঙ্গলবারের আয়কর দফতরে হাজিরায় কি হবে সেই চিন্তায় ঘুম উড়েছে মায়ের ভক্তদের।

আরও পড়ুনঃ

শীতের বাংলায় বৃষ্টি আনতে আন্দামান থেকে আসছে ঘূর্ণিঝড় ‘পাবুক’

EXCLUSIVE: সংখ্যালঘুদের ধর্মে সুড়সুড়ি দিয়ে প্রকাশ্যে ভারতের টাকার কালোবাজারি

EXCLUSIVE: নতুন বছরে সুখবর, রাজ্য সরকারি কর্মীরা পাচ্ছেন বকেয়া ডিএ

‘রাম’কে ছেড়ে আসা লক্ষণকে ‘হাতে’ নিয়ে বাংলায় তুলকালাম

আপনার মোবাইলে বা কম্পিউটারে The News বাংলা পড়তে লাইক করুন আমাদের ফেসবুক পেজ।

Comments

comments

আপনাদের মতামত জানাতে কমেন্ট করুন