উঠল বিজেপি বিরোধী সত্যাগ্রহ ধর্ণা, ধর্মতলার ধর্ণা প্রধানমন্ত্রী করতে পারবে মমতাকে

642
ভারতের সংবিধান রক্ষা করতে ধর্মতলায় আবার ধর্ণা/The News বাংলা
ভারতের সংবিধান রক্ষা করতে ধর্মতলায় আবার ধর্ণা/The News বাংলা

তিনদিনের মাথায় মঙ্গলবার সন্ধায় উঠে গেল মমতার সংবিধান বাঁচাতে সত্যাগ্রহ ধর্ণা। চন্দ্রবাবু নাইডুকে পাশে নিয়ে ধর্ণা তুলে নেবার কথা ঘোষণা করলেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু কেন এই ধর্ণা, রয়ে গেল প্রশ্ন। কলকাতার পুলিশ কমিশনার রাজীব কুমারের বাড়িতে সিবিআই হানাকে সামনে রেখে কি কি রাজনৈতিক তাস খেলতে চাইলেন মমতা? উঠছে প্রশ্ন।

আরও পড়ুনঃ সারদা কাণ্ডে পুলিশ কমিশনারকে সিবিআই জেরা কবে, তা নিয়েও লড়াই তুঙ্গে

তিনদিনের ধর্ণায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর সংবিধান বাঁচানোর লড়াইয়ে জাতীয় রাজনীতির একাধিক নেতানেত্রীর সমর্থন পেয়েছেন। কলকাতার ধর্মতলার ধর্ণা মঞ্চে সিঙ্গুর আন্দোলনের সময়েও এভাবেই প্রতিবাদ অবস্থানে বসতে দেখা গিয়েছিল তৃণমূল সুপ্রিমোকে। ২৬ দিনের অনশন আন্দোলনের পরবর্তী পর্যায়ে তিনি বাংলার মুখ্যমন্ত্রীর আসনে বসেন। আর এবার তাঁর সামনে প্রধানমন্ত্রিত্বের হাতছানি!

আরও পড়ুনঃ মমতার নির্দেশে সিবিআই অফিসারদের আটক করে বাংলার আইপিএসরা বিপদে

সিবিআই নোটিশ দেবার আগেই জেরার মুখোমুখি হতে নিজে চিঠি দিলেন পুলিশ কমিশনার
সিবিআই নোটিশ দেবার আগেই জেরার মুখোমুখি হতে নিজে চিঠি দিলেন পুলিশ কমিশনার/The News বাংলা

সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পরও অবশ্য ধর্ণার মেয়াদ নিয়ে প্রথমে কোনও সিদ্ধান্ত নেননি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি জানিয়েছিলেন, “সবার সঙ্গে কথা বলেই এই ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। সুপ্রিম কোর্টে আমাদের নৈতিক জয় হয়েছে। পুরো দেশ এই আন্দোলনকে সমর্থন জানিয়েছে”। তেজস্বী যাদব, কানিমোঝি, চন্দ্রবাবু নাইডু এসেছেন মমতার ধরনা-মঞ্চে। দেশ জুড়ে বিজেপি বিরোধী দলগুলি এই আন্দোলনে মমতাকে সমর্থন জানিয়েছেন। কিন্তু কেন এই ধর্ণা রয়ে গেল প্রশ্ন।

আরও পড়ুনঃ সারদা চিটফাণ্ড মামলায় রাজীবকে জেরা করতে কি কি প্রশ্ন সাজাচ্ছে সিবিআই

কলকাতার পুলিশ কমিশনার রাজীব কুমারকে মেঘালয়ের শিলংয়ে একটি নিউট্রাল জায়গায় হাজিরা দিয়ে সিবিআই জেরার মুখোমুখি হবার নির্দেশ দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। তবে এখনই গ্রেফতার করা যাবে না তাঁকে, জানিয়ে দিয়েছে দেশের শীর্ষ আদালত। রাজীব কুমারকে গ্রেফতার করা যাবে না, এটাই কি মমতার ধর্ণার লক্ষ্য ছিল? সেই তো সরাসরি সিবিআই জেরার মুখোমুখি হতে হচ্ছে রাজীব কুমারকে? তাহলে!?

আরও পড়ুনঃ সম্পর্কের খাতিরে চাকরি দুর্নীতি, রাজ্যের দফতরে কর্মীদের মুখরোচক গল্প

উঠল মমতার সত্যাগ্রহ ধর্ণা, কিন্তু কি কি কারণে ধর্মতলায় ধর্ণা দিলেন মমতা/The News বাংলা
উঠল মমতার সত্যাগ্রহ ধর্ণা, কিন্তু কি কি কারণে ধর্মতলায় ধর্ণা দিলেন মমতা/The News বাংলা

সিবিআই তো রাজীব কুমারকে জেরা করতেই চাইছিল। বারবার ডেকে তাঁর সাড়া না পাওয়ায় তাঁকে প্রশ্ন করতেই বাড়িতে হাজির হয় সিবিআই। যার প্রতিবাদে রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ আন্দোলন শুরু করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু জল যেখানে থাকার সেখানেই রইল। তাহলে মমতার এই ধর্ণা কেন রয়ে গেল প্রশ্ন। শুধুই রাজধানী দিল্লিতে নিজের ক্ষমতা জাহির করার জন্য?

আরও পড়ুনঃ সিবিআই জেরা থেকে পালাতে পারবেন না রাজীব কুমার, মমতা বললেন ‘নৈতিক জয়’

কেন্দ্রের অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি জানিয়েছেন, সিবিআই-পুলিশ নয়, কেন্দ্রের রাজনীতিতে নিজেকে আরও প্রাসঙ্গিক করতেই মমতার এই ধর্ণা। মোদী বিরোধী জোটের নেতা বা মুখ হিসাবে নিজেকে তুলে ধরতেই কি লোকসভা ভোটের আগে এইভাবে রাস্তায় নেমে আন্দোলন? রয়ে গেল প্রশ্ন।

উঠল মমতার সত্যাগ্রহ ধর্ণা, কিন্তু কি কি কারণে ধর্মতলায় ধর্ণা দিলেন মমতা
উঠল মমতার সত্যাগ্রহ ধর্ণা, কিন্তু কি কি কারণে ধর্মতলায় ধর্ণা দিলেন মমতা/The News বাংলা

মমতার ধর্মতলার ধর্ণা মঞ্চের আন্দোলন ঝড় তুলেছে লোকসভাতেও। মোদী বিরোধীরা সবাই লোকসভা ভোটের আগে মমতার এই কেন্দ্র বিরোধী আন্দোলনকে সমর্থন করেছেন। ব্রিগেডের পর রাজধানীর রাজনীতিতে যে আরও একবার নিজেকে প্রাসঙ্গিক করলেন সেটা পরিষ্কার। ব্রিগেডের পর নিজের নিজের রাজ্যে ফিরে গিয়ে অনেক নেতাই ফের রাহুলকে প্রধানমন্ত্রী করার কথা বলেছেন। এই ধর্ণা আন্দোলনের পর মমতা আবার বোঝাতে পেরেছেন মোদী বিরোধী মুখ তিনিই।

আরও পড়ুনঃ রাজীব কুমারকে সিবিআই দফতরে হাজিরার নির্দেশ দিল সুপ্রিম কোর্ট

একধাক্কায় চাপা দিয়েছেন তৃণমূল বিরোধী সব ইস্যুকে। চাপা দিয়েছেন বিজেপির রথ যাত্রার ইস্যুকে। মোদী, যোগী বা রাজনাথের সভা নিয়ে বিজেপির আন্দোলনকে একধাক্কায় থামিয়ে দিতে পেরেছেন। লোকসভা ভোটের আগে প্রচারের পুরো সার্চলাইট নিজের দিকে টেনে নিতে পেরেছেন ফের রাস্তায় এই ধর্ণার মাধ্যমে। এক ঝটকায় থামিয়ে দিয়েছেন বামেদের সফল ব্রিগেডের চর্চাকে।

আরও পড়ুনঃ তথ্যপ্রমাণ নষ্টের প্রমাণ পেলে পুলিশ কমিশনারকে উচিত শিক্ষা দেওয়া হবে হুঁশিয়ারি সুপ্রিম কোর্টের

আর কিছু হোক না হোক, ব্রিগেডের পর ফের নিজেকে সর্বভারতীয় স্তরে তুলে ধরতে পেরেছেন মমতা। ধর্মতলায় ২৬ দিনের ধর্ণা আন্দোলন তাঁকে বসিয়ে ছিল রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী পদে। ৩ দিনের এই ধর্ণা আন্দোলন তাঁকে প্রধানমন্ত্রীর গদি পর্যন্ত পৌঁছে দিতে পারে কিনা সেটাই এখন দেখার। তবে মমতার রাজনৈতিক উত্থানের জন্য রাজীব কুমার সহ কয়েকজন আইপিএস অফিসারের কেরিয়ার যে কলকাতার রাজপথে জলাঞ্জলি দেওয়া হল, সেটা কিন্তু জলের মত পরিস্কার।

Comments

comments

আপনাদের মতামত জানাতে কমেন্ট করুন